পাহাড়ে লিচুর হাসি

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর একটি বাগানে ডাঁসা ডাঁসা লিচু। গত বুধবার বিকেলে। ছবি: প্রথম আলো
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর একটি বাগানে ডাঁসা ডাঁসা লিচু। গত বুধবার বিকেলে।  ছবি: প্রথম আলো

পাহাড়ে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পাকা লিচুর ভরা মৌসুম শুরু হয়। লিচু তুলতে ক্রেতা-শ্রমিকেরা ভিড় করেন। এতে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। দাম ও নগদ টাকা পেয়ে চাষিদের মুখে হাসি ফোটে। কিন্তু এ বছর তা হয়নি। করোনাভাইরাস সেই হাসি কেড়ে নিয়েছে। তার বদলে চাষিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। কিছু সংখ্যক চাষি খুব কম দরে বিক্রি করলেও ক্রেতা না থাকায় অধিকাংশ চাষি তা পারেননি। বিক্রি না হওয়ায় বাদুড়সহ নানা পাখিতে লিচু খেয়ে ফেলছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।

রাঙামাটি শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে বিলাইছড়ি পাড়ার লিচুচাষি সুমন চাকমা। অনেক অনুরোধ করে এক স্থানীয় ক্রেতার কাছে মাত্র ৩০ হাজার টাকায় বাগানটি বিক্রি করেন। অথচ অন্যান্য বছর এই বাগান ৯০ থেকে ১ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় তাঁর আশা ছিল কমপক্ষে দেড় লাখ টাকায় বাগানটি বিক্রি করতে পারবেন।

তাঁর প্রতিবেশী লিচুচাষি কিরণ লাল চাকমারও একই অবস্থা। প্রতিবছর কমপক্ষে ২ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করতেন তিনি। এ বছর কেবল ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন।

রাঙামাটি সদর উপজেলায় বড়াদম গ্রামের পলাশ চাকমা, নিহারবিন্দু চাকমাসহ অনেক চাষিই পানির দরে লিচু বিক্রি করেছেন। শহরের বিভিন্ন বাজারে ১০০ লিচু খুচরা ৩০ থেকে ৭০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধু লিচু নয়, আম, কাঁঠাল ও আনারসও বিক্রি হচ্ছে অনেক কম দামে।

লিচুচাষিরা জানান, বৈশাখ মাসের শুরুতেই ব্যবসায়ীরা আসতে থাকেন লিচুবাগান দেখতে। বাগান দেখে অগ্রিম টাকা দেওয়া হয়। এ বছর গাছে লিচু পাকার ভরা মৌসুমেও ক্রেতার দেখা নেই। শুধু স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী শহরের আশপাশের গ্রাম থেকে স্থানীয় বাজার বিক্রি করার জন্য লিচু সংগ্রহ করছেন। কিন্তু করোনা আতঙ্কে অধিকাংশ গ্রাম এখনো লকডাউন করে রাখা হয়েছে। সে জন্য সেখানে ক্রেতারা যাচ্ছে না। এতে গাছে লিচু নষ্ট হচ্ছে।

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ৫৭০ একর জমিতে লিচু চাষ করা হয়েছে। ফলন ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৫৩৮ মেট্রিক টন। দেশীয়, চায়না থ্রি, চায়না টু ও বোম্বে জাতের লিচু চাষ করা হয়েছে।

গত শুক্রবার সদর উপজেলার বড়াদম, বিলাইলচি পাড়াসহ অন্তত ছয় স্থানে লিচুবাগানে গিয়ে দেখা যায়, থোকায় থোকায় ঝুলছে ডাসা ডাসা লিচু। কিন্তু কত দিন গাছে লিচু রাখা যাবে, তা নিয়ে চিন্তায় আছেন বাগানমালিকেরা। কারণ, পাখির অত্যাচার লেগেই আছে।

সদরের বিলাইছড়ি পাড়ার সুমন চাকমা ও বাঘাইছড়ি উপজেলার সোনারাম চাকমা বলেন, ‘প্রতিবছর আমাদের লিচু কাঁচা অবস্থায় বিক্রি হয়। এ বছর পেকে যাওয়ার পরও ক্রেতা আসেনি। শেষ পর্যন্ত কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি। পরিচর্যার খরচও উঠে আসেনি। যাঁদের বাগান শহর একটু দূরে, তাঁরা একেবারেই বেচতে পারেননি।’

রাঙামাটির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পবন কুমার চাকমা বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে চলতি মৌসুমে ফলবাগানিরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না।