পাবনা ও শাহাজাদপুরের বাসমালিক-শ্রমিকদের দ্বন্দ্বে জেলায় আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ধর্মঘটে জেলার সড়কে বাস, ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে হাজার হাজার যাত্রী।
পরিবহন নেতা ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আজ বিকেলে বেড়া উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে পাবনা ও সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় বিবাদমান দুই পক্ষের নেতাদের নিয়ে একটি সভা হচ্ছে। এতে পাবনা ও সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক, শাহজাদপুর ও বেড়ার ইউএনও, ওসিসহ অন্যান্য কর্মকর্তার উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। সেখান থেকে ধর্মঘটের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
পাবনা ও শাহাজাদপুরের পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই সংগঠনের দ্বন্দ্বে পাবনা থেকে ঢাকার মধ্যে সরাসরি বাস চলাচল ১৮ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। পাবনা থেকে ঢাকার মধ্যে বাস চলাচল শাহজাদপুর হয়ে সহজ হলেও এ পথের বাসগুলো চলছে ৫০ থেকে ৮০ কিলোমিটার অতিরিক্ত ঘুরে নাটোরের বনপাড়া হয়ে। এ ছাড়া শাহজাদপুর থেকে বেড়া ও পাবনা হয়ে রাজশাহী, খুলনা, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে এবং পাবনা থেকে শাহজাদপুর হয়ে বগুড়া, টাঙ্গাইল, জামালপুর, ময়মনসিংহ প্রভৃতি স্থানে চলাচলকারী অর্ধশতাধিক যাত্রীবাহী বাসের চলাচলও বন্ধ রয়েছে। এতে সাধারণ মানুষকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
এ অবস্থায় পাবনা জেলা পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ৬ দফা দাবিতে আজ সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করে। এ বিষয়ে গতকাল বুধবার দিনব্যাপী মাইকিং করা হয়। ৬ দফা দাবিগুলো হচ্ছে শাহজাদপুরে পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ, অন্যায় অত্যাচার বন্ধ, পরিবহন ভাঙচুর বন্ধ, মহাসড়কে পরিবহন আইন অমান্য রোধ, শাহজাদপুরে বাসে যাত্রী তোলা নিয়ে হয়রানি বন্ধ এবং শাহজাদপুরে পাবনা জেলা বাসের জন্য বুকিং কাউন্টার নির্মাণ করা।
দাবি পূরণে পাবনা জেলা পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। কিন্তু দাবি পূরণ না হওয়ায় আজ থেকে পাবনা জেলায় শুরু হয় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট। ধর্মঘটে পাবনা থেকে ২২টি জেলায় চলা কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। অন্য জেলা থেকেও কোনো বাস পাবনায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
সকাল থেকেই পরিবহনশ্রমিকদের জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ সমাবেশ করতে দেখা গেছে। এ সময় বেড়া বাসস্ট্যান্ড, কাশিনাথপুর বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন জায়গায় পরিবহনশ্রমিকেরা রাস্তা অবরোধ করে ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন আটকে রাখেন। বাস বন্ধ থাকায় অনেকেই ট্রাকে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করলেও ট্রাকগুলোকে আটকে দিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, নসিমন-করিমনও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ থকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে হাজারো মানুষ। আজ বেলা একটায় বেড়া বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকেরা অন্য জেলা থেকে আসা ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ কয়েক শ যানবাহন আটকে দিয়েছে। এ সময় যানবাহনের অভাবে যাত্রীদের হেঁটে অথবা রিকশা-ভ্যানে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায়। বেড়া বাসস্ট্যান্ডে স্ত্রীসহ দাঁড়িয়েছিলেন বেড়ার হাটুরিয়া গ্রামের আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, পাবনা শহরে স্ত্রীকে ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল। কিন্তু দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা করতে পারেননি। তাই বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মাথায় বস্তা নিয়ে কাশিনাথপুরের দিকে হেঁটে যেতে দেখা যায় চার-পাঁচজন শ্রমিককে। তাঁদের মধ্য থেকে মন্টু মিয়া বলেন, উল্লাপাড়া থেকে কাশিনাথপুর যাওয়ার জন্য একটি ট্রাকে উঠেছিলেন তিনিসহ ২৫ থেকে ৩০ জন। বেড়ায় ট্রাকটি আটকে তাঁদের সবাইকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁরা হেঁটে কাশিনাথপুরের দিকে যাচ্ছেন। সামনে যদি কোনো রিকশা-ভ্যান বা নসিমন পাওয়া যায়, তাতে উঠবেন।
মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের পাবনা জেলার সাবেক সহসভাপতি ও বেড়া উপজেলার সাধারণ সম্পাদক রইজউদ্দিন বলেন, ‘শাহজাদপুরের মালিক–শ্রমিকদের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে পড়েছি। তাই বাধ্য হয়েই আমাদের পরিবহন ধর্মঘটে যেতে হয়েছে। বৈঠকে সমাধান হলে ভালো, নইলে আমাদের ধর্মঘট চলবে।’
শাহজাদপুর মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসনের উদ্যোগে আমরা পাবনার মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে বসছি। আশা করি, সেখানে বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।’
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ আনাম সিদ্দিকী বলেন, দুই সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বিকেলে বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে। সেখানে পাবনা ও সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসকদের আসার কথা রয়েছে।