সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় আজ রোববার বন্যার পানি কিছুটা কমলেও জেলা শহরের সঙ্গে উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। এ ছাড়া উপজেলার আট ইউনিয়ন থেকে উপজেলা সদরের সড়ক যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গত দুই দিনে শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও সেখানে কোনো ধরনের খাদ্যসহায়তা পৌঁছায়নি। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে উপজেলার লাখো মানুষ। তবে কিছু কিছু আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিচ্ছিন্ন আছে বিদ্যুৎ ও মুঠোফোন নেটওয়ার্ক সংযোগ।
কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, খাবার, সুপেয় পানির সংকট ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় হাহাকার অবস্থা বিরাজ করছে। বেসরকারি উদ্যোগেও ত্রাণ বিতরণের দৃশ্য চোখে পড়েনি।
জগন্নাথপুর পৌরসভা আশ্রয়কেন্দ্রে সত্তরোর্ধ্ব হারুন মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মতো করুণ অবস্থা বিরাজ করছে। দুই দিন ধরে বৃদ্ধ মা এবং দুই অবুঝ শিশুকে নিয়ে না খেয়ে আছি। শুধু একবেলা বাজার থেকে মুড়ি কিনে এনে খেয়েছিলাম।’
পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন জগন্নাথপুর গ্রামের বাদশা মিয়া। তিনি বলেন, কেউ খোঁজখবর নিতে আসছে না। জগন্নাথপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে শতাধিক পরিবার।
চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে লাশ দাফনেরও কোনো শুকনো মাটি নেই। গত দুই দিন হলো বের হয়েছি। খোঁজখবর নিচ্ছি। কোনো ত্রাণ পৌঁছাতে পারিনি।’
জগন্নাথপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজেদুল ইসলাম বলেন, আজ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার বিতরণ শুরু করা হয়েছে। সব জনপ্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। ইতিমধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বরাদ্দের চাল বিতরণ করতে বলেছেন। তিনি বলেন, সরকারিভাবে ৪৩ মেট্রিকটন চাল ও ১ হাজার ১০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পাওয়া গেছে। এ ছাড়া হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে আরও ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার দিয়েছেন। তিনি জানান, পানি কিছুটা কমলেও বাসাবাড়িতে এখনো পানি আছে।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বিজন কুমার দেব প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্যায় মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। স্মরণকালের ভয়াবহ দুর্যোগে অনেকে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন। অনেকের দোকান, মাছের খামার ও জিনিসপত্র বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।’