সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে পরিবারের সদস্যদের অগোচরে পানিতে ডুবে মারা যায় এসব শিশু।
পটুয়াখালীতে এক বছরে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু দ্বিগুণ হয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে জেলায় ২৯ শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে। ২০২১ সালে এ সংখ্যা বেড়ে হয় ৫৬। এ সময়ে পানিতে ডুবে যাওয়ার উপক্রম হলেও বেঁচে যায় ১৬৮ শিশু। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে জেলায় ৭ শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে।
সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে পরিবারের সদস্যদের অগোচরে পানিতে ডুবে মারা যায় এসব শিশু। এদের বেশির ভাগের বয়স ৬ বছরের নিচে।
পটুয়াখালী সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২০ সালে জেলার ৭ উপজেলায় পানিতে ডুবে মারা যাওয়া ২৯ শিশুর মধ্যে দশমিনায় ৯ জন, কলাপাড়ায় ৮, বাউফলে ৪, দুমকিতে ৩, মির্জাগঞ্জে ৩ ও গলাচিপায় ২ শিশু রয়েছে। এ সময় পানিতে ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েও বেঁচে যায় ৯৬ শিশু।
২০২১ সালে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়। এ সময় ছয় উপজেলায় পানিতে ডুবে মারা যাওয়া ৫৬ শিশুর ১৮ জন দশমিনা উপজেলার। এ ছাড়া কলাপাড়ায় ১০, বাউফলে ৯, দুমকিতে ৮, গলাচিপায় ৮, মির্জাগঞ্জে ৩ শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এ সময় পানিতে ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েও বেঁচে যায় ৭২ শিশু।
তবে সরকারিভাবে পটুয়াখালী সদর উপজেলায় পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর তথ্য জানা যায়নি। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনো শ্রেণিবিভাগ না করে শিশুদের সব ধরনের মৃত্যুকে একত্রে শিশুমৃত্যু হিসেবে দেখানো হয়। তাই সদর উপজেলায় পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া অনেক সময় পানিতে ডুবে মৃত্যুর সব ঘটনার তথ্য সংশ্লিষ্ট অফিস পায় না। তাই জেলায় পানিতে ডুবে প্রকৃত শিশুমৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি হওয়ার কথা।
গত ১৫ জানুয়ারি সকালে দশমিনা উপজেলার সদর ইউনিয়নের পশ্চিম লক্ষ্মীপুর গ্রামে নিলয় মাঝি নামে দুই বছরের শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। শিশুটির বাবা বিমল মাঝি বলেন, সকাল ১০টার দিকে ঘরের সামনে উঠানে রোদের মধ্যে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলছিল নিলয়। পরে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রায় এক ঘণ্টা পর বাড়ির পাশে পুকুর থেকে তার ভাসমান লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, ‘ওই পুকুরের চারপাশ খোলা ছিল। পুকুরটা জাল দিয়ে আটকানো হলে আমার সন্তান এভাবে পানিতে ডুবে মারা যেত না।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে ১০টি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে। এর তিনটিই বাংলাদেশের সাফল্যের অভিজ্ঞতা থেকে নেওয়া। এগুলো হলো শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র, সাঁতার শেখানো ও প্রাথমিক চিকিৎসা। শিশুমৃত্যু রোধে কাজ করে বেসরকারি সংগঠন সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চের (সিআইপিআরবি) যোগাযোগ ব্যবস্থাপক নাহিদ আক্তার বলেন, দেশে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর ৬০ শতাংশ ঘটে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টার মধ্যে। তাই এ সময়ে শিশুকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা গেলে শিশুমৃত্যু রোধ করা সম্ভব।
পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন এস এম কবির হোসেন বলেন, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে পুকুরের চারদিকে নেট দিয়ে বেড়া দেওয়া ও বাড়ির পাশে অপ্রয়োজনীয় ডোবা মাটি ফেলে ভরাট করে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এ ছাড়া নির্দিষ্ট বয়সের পর শিশুদের সাঁতার শেখানোর বিষয়টিকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে।