পাগলা মসজিদের সিন্দুকে রেকর্ড পরিমাণ টাকা, সোনা ও হীরা

টাকা গণনায় মাদ্রাসার দেড় শতাধিক ছাত্র–শিক্ষক ছাড়াও রূপালী ব্যাংকের প্রায় ৫০ জন কর্মকর্তা অংশ নেন। শনিবার কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদে
ছবি: তাফসিলুল আজিজ

এবার কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দান সিন্দুকে রেকর্ড পরিমাণ ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৫ টাকা পাওয়া গেছে। চার মাস ছয় দিন পর শনিবার পাগলা মসজিদের আটটি সিন্দুক খোলা হয়। সেখানে পাওয়া ১৫ বস্তা টাকা দিনভর গুনে সন্ধ্যায় এ হিসাব পাওয়া যায়।

বিপুল পরিমাণ দানের এই নগদ টাকা ছাড়াও দান হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রা, হীরা ও বেশ কিছু স্বর্ণালংকার পাওয়া গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এর আগে কখনো একসঙ্গে এত টাকা পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ ৬ নভেম্বর দান সিন্দুক খোলা হয়েছিল। তখন স্বর্ণালংকার, বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়াও ৩ কোটি ৭ লাখ ১৭ হাজার ৫৮৫ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।

শনিবার সকাল ৯টা থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নাজমুল ইসলাম সরকারের নেতৃত্বে দান সিন্দুক খোলা হয়। টাকা গণনার কাজ তদারক করেন কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও মসজিদ কমিটির সদস্যরা। সিন্দুক থেকে ১৫টি বস্তায় টাকা ভরা হয়। এরপর মেঝেতে রেখে শুরু হয় দিনব্যাপী টাকা গণনা। টাকা গণনায় মাদ্রাসার দেড় শতাধিক ছাত্র–শিক্ষক ছাড়াও রূপালী ব্যাংকের প্রায় ৫০ জন কর্মকর্তা অংশ নেন। দুপুরে মসজিদ পরিদর্শনে আসেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দানের টাকায় একটি আন্তর্জাতিক মানের ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি হবে এশিয়ার অন্যতম একটি স্থাপনা। এর জন্য আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। এতে একসঙ্গে ৩০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। ৮ মার্চ জেলা প্রশাসনের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ মসজিদটির দান সিন্দুকগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রা, টাকাপয়সা ছাড়াও স্বর্ণালংকার দান করেন। গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রও দান করেন। কথিত আছে, খাস নিয়তে এই মসজিদে দান করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়। সে জন্য দূরদূরান্ত থেকে ধর্ম–মতনির্বিশেষে অসংখ্য মানুষ এখানে দান করে থাকেন।

কিশোরগঞ্জ শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে মসজিদটির অবস্থান। দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে পাগলা মসজিদ ইসলামি কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়েছে। এ মসজিদের আয় দিয়ে কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতসহ জটিল রোগীদের চিকিৎসায় এ অর্থ ব্যয় করা হয়।

তিন–চার মাস অন্তর অন্তর পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খোলা হয়। প্রতিবারই দুই থেকে তিন কেটি টাকা মেলে

তবে দেশ–বিদেশে এ মসজিদের নাম ছড়িয়ে পড়লেও এটি দেখতে এসে অনেকে হতাশ হন। সে জন্য দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি ছিল এখানে দৃষ্টিনন্দন একটি স্থাপনা তৈরির। তিন–চার মাস অন্তর অন্তর এ মসজিদের দান সিন্দুক খোলা হয়। প্রতিবারই দুই থেকে তিন কেটি টাকা মেলে। সমস্ত টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়।

পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, এবার গণনা শেষে যে টাকা পাওয়া গেছে, তা রূপালী ব্যাংকে জমা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের মুদ্রাসহ বেশ কিছু স্বর্ণালংকার পাগলা মসজিদের দান বাক্সে জমা পড়েছে। এখানে স্বপ্নের মতো একটি আন্তর্জাতিক মানসম্মত ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।