আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় সংঘর্ষে জড়িয়েছে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন অন্তত সাতজন।
আজ সোমবার সকালে কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সাংসদ নূর মোহাম্মদ ও সাবেক সাংসদ মো. সোহরাব উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সাংসদ নূর মোহাম্মদের অনুসারী নেতা–কর্মীদের নিয়ে পাকুন্দিয়া সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যান পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। পৌনে ১০টার দিকে সাবেক সাংসদ ও উপজেলার আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মো. সোহরাব উদ্দিন নেতা–কর্মীদের নিয়ে শোভাযাত্রা সহকারে ওই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে রওনা দেন। পথে থানার মোড়ে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। তবে এ বাধা উপেক্ষা করে শ্রদ্ধা জানাতে যান তাঁরা। সোহরাব উদ্দিন শহীদ মিনারে ওঠামাত্রই তাঁদের লক্ষ্য করে বিরোধীপক্ষ ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় দুই পক্ষের ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। ইটের আঘাতে অন্তত সাতজন আহত হন। এ সংঘর্ষের মধ্যেই সোহরাব উদ্দিন উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দিনসহ অন্য নেতা–কর্মীদের নিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান। পরে বিশাল শোভাযাত্রা নিয়ে পাকুন্দিয়ার প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মঠখোলা সড়কের প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সামনে গিয়ে নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন তিনি।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকাল থেকেই পাকুন্দিয়া শহরে পুলিশ মহড়া দিচ্ছিল। এ পরিস্থিতিতে সদর বাজারজুড়ে আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ রাখেন। সকাল পৌনে ১০টা থেকে পুরো পাকুন্দিয়া উপজেলা শহর সাবেক সাংসদ সোহরাবের কর্মী-সমর্থকদের দখলে চলে যায়। এরপর তাঁরা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে পৌঁছালেই সংঘর্ষ লেগে যায়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ জুলাই মো. সোহরাব উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করে জেলা আওয়ামী লীগ। এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ বর্তমান সাংসদ নূর মোহাম্মদের সমর্থকেরা সোহরাব উদ্দিনের অব্যাহতি চেয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। এর মধ্যে ৯ সেপ্টেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের ৬৭ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় জেলা আওয়ামী লীগ। এরপর গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে সোহরাব উদ্দিনের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা নিয়ে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানাতে এলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই সময় উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত ও একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
আজকের সংঘর্ষের বিষয়ে কথা বলতে বর্তমান সাংসদ নূর মোহাম্মদের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে তাঁর অনুসারী উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, আজ শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে সোহরাব উদ্দিন যে ঘটনা ঘটিয়েছেন, সেটা ন্যক্কারজনক। তিনি হাজার হাজার নেতা–কর্মী নিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসেন। যেটা বাংলাদেশে মনে হয় আর কোনো জায়গায় ঘটেনি।
তবে সোহরাব উদ্দিন বলেন, ‘আমরা নেতা–কর্মীদের নিয়ে শান্তভাবে শহীদ মিনারের দিকে যাচ্ছিলাম। প্রথমে আমাদের পুলিশ বাধা দেয়। ওই বাধা উপেক্ষা করে আমরা শহীদ মিনারে ফুল দিতে ওঠামাত্র সাংসদ নূর মোহাম্মদের নির্দেশে তাঁর কিছু অনুসারী আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এ সময় তাঁরা ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। আমরা এ হামলা প্রতিহত করেই শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে এসেছি। আমাদের ওপর যতই বাধা আসুক, সেসব উপেক্ষা করে পাকুন্দিয়ার আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করব।’
পাকুন্দিয়া থানার ওসি মো. সারোয়ার জাহান বলেন, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা চত্বরের পাশে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন সাংসদ নূর মোহাম্মদের অনুসারীরা। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি থেকে ১০ জন সদস্য পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তাঁদের মধ্যে কমিটির ১ নম্বর সদস্য উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, পাকুন্দিয়া পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী মো. হুমায়ুন, মো. আতাউল্লাহ সিদ্দিক, মো. শাহাব উদ্দিন পদত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা করে বক্তব্য দেন।