কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা করে অবিলম্বে তা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে সংগঠনটির একাংশের নেতা–কর্মীরা।
রোববার বিকেলে পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলামের সমর্থক দলীয় নেতা-কর্মীরা মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। মিছিলটি উপজেলা সদর ঈদগাহ ফটকের সামনে থেকে শুরু হয়ে পৌর সদর বাজারের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে পুনরায় একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়।
পরে সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পাকুন্দিয়া সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিক হোসেনের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন নবগঠিত কমিটির সদস্য ও জেলা পরিষদ সদস্য হাদিউল ইসলাম, নবগঠিত কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, বিতর্কিত ব্যক্তিকে আহ্বায়ক করে এবং বিএনপি-জামায়াতের লোকদের নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা এই বিতর্কিত কমিটি মানেন না। অবিলম্বে এই কমিটি বাতিল করতে জেলা নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
১৫ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রফিকুল ইসলাম। ৯ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনের সাবেক সাংসদ মো. সোহরাব উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে ৬৭ সদস্যের উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় জেলা আওয়ামী লীগ। নবগঠিত এই আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা দেওয়া হয় ১৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায়। কমিটিতে মো. রফিকুল ইসলামকে ১ নম্বর সদস্য রাখা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই দিন রাতেই ফেসবুকে কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি।
এর ধারাবাহিকতায় রফিকুল ইসলাম ১৫ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আহমদ উল্লাহর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। আহ্বায়ক কমিটি থেকে পদত্যাগ করলেও রফিকুল ইসলাম পদত্যাগপত্রে লেখেন, ‘ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে অদ্যাবধি দলীয় সকল কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত কাজ করে যাব।’
পদত্যাগপত্রে রফিকুল ইসলাম আরও লেখেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিষয়ের দ্বন্দ্ব নিরসনে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাংসদ মির্জা আজম কোভিড-১৯–এর কারণে এক এক করে তিনবার বর্ধিত সভার তারিখ পরিবর্তন করেন। হঠাৎ করে জেলা আওয়ামী লীগ মির্জা আজমকে ছাড়া গত ২২ জুলাই কিশোরগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিতে কার্যনির্বাহী কমিটির সভা আহ্বান করে। পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কারও কোনো মতামত ও পাকুন্দিয়ার যাঁরা জেলা কমিটির সদস্য রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে সভায় সুপরিকল্পিতভাবে সোহরাব উদ্দিনের নাম পাকুন্দিয়া উপজেলা আহ্বায়ক হিসেবে প্রস্তাব করা হয়। সেদিন সঙ্গে সঙ্গে সেটি নিয়ে তিনি তীব্র প্রতিবাদ করেন।
৯ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী) আসনের সাবেক সাংসদ সোহরাব উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে ৬৭ সদস্যের পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় জেলা আওয়ামী লীগ। ১৩ সেপ্টেম্বর কমিটির বিষয়টি জানার পরই আন্দোলনের ঘোষণা দেয় প্রতিপক্ষ।
এ বিষয়ে নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক সোহরাব উদ্দিন বলেন, কমিটিতে কোনো বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতা নেই। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে তো আর সবাইকে রাখা যাবে না। এতে সন্তোষ–অসন্তোষ থাকতেই পারে। তবে সবাইকে নিয়ে তিনি দলকে সুসংগঠিত করার কাজ করে যাবেন।