নরসিংদীতে চূড়ান্ত পাওনা পরিশোধের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ইউএমসি জুটমিলের অস্থায়ী শ্রমিকেরা। আজ সোমবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত জেলা শহরের নাগরিয়াকান্দি এলাকায় পাটকলটির মূল ফটকের সামনে শতাধিক অস্থায়ী শ্রমিক এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। উত্তেজিত শ্রমিকেরা শহরের সাটিরপাড়া-নাগরিয়াকান্দি সড়কে তিন ঘণ্টা বসে থাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
নানা আশ্বাস দেওয়ার পরও পাটকলটির অস্থায়ী শ্রমিকদের চূড়ান্ত পাওনার ২১ কোটি ১৭ লাখ টাকা এখনো পরিশোধ করা হয়নি।
পাটকল সূত্রে জানা গেছে, অব্যাহত লোকসানের কারণে গত বছরের ৭ জুলাই ইউএমসি জুটমিলসহ দেশের সব রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। তখন স্থায়ী ও অস্থায়ী সব শ্রমিকের বকেয়া বেতনসহ যাবতীয় পাওনা গত বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। ইউএমসি জুটমিলে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ছয় হাজার শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। এর মধ্যে প্রায় তিন হাজার স্থায়ী ও বাকি প্রায় তিন হাজার অস্থায়ী শ্রমিক। স্থায়ী শ্রমিকদের চূড়ান্ত পাওনার ১৬০ কোটি টাকা ব্যাংকের ও ১৪০ কোটি টাকা সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ইতিমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু নানা আশ্বাস দেওয়ার পরও পাটকলটির অস্থায়ী শ্রমিকদের চূড়ান্ত পাওনার ২১ কোটি ১৭ লাখ টাকা এখনো পরিশোধ করা হয়নি।
৯ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, অস্থায়ী বা বদলি শ্রমিকদের এরিয়ার বিল প্রদান, পাঁচ সপ্তাহের বকেয়া বিল পরিশোধ, বিভিন্ন পাওনা পরিশোধ, মৃত শ্রমিকদের মৃতদাবি বিল পরিশোধ, মামলাকৃত শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ, শ্রমিকদের চূড়ান্ত হিসাব প্রদান।
এসব বকেয়া পাওনা অবিলম্বে পরিশোধসহ ৯ দফা দাবিতে শ্রমিকেরা আজ এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। ৯ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, অস্থায়ী বা বদলি শ্রমিকদের এরিয়ার বিল প্রদান, পাঁচ সপ্তাহের বকেয়া বিল পরিশোধ, বিভিন্ন পাওনা পরিশোধ, মৃত শ্রমিকদের মৃতদাবি বিল পরিশোধ, মামলাকৃত শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ, শ্রমিকদের চূড়ান্ত হিসাব প্রদান, গত বছরের ১ জুলাইয়ে অবসর নেওয়া শ্রমিকদের চিঠি/সার্ভিস বই প্রদান, মহার্ঘ ভাতার বকেয়া বিল প্রদান ও অ্যাফিডেভিট করে সোনালী ব্যাংকের সঞ্চয়পত্র ফরম পূরণ করা শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ করা।
শাহাদাত মিয়া নামের এক অস্থায়ী শ্রমিক বলেন, ‘আমি ২৬ বছর ধরে এই পাটকলে বদলি শ্রমিক হিসেবে কাজ করছি। এখানে কাজ করে জীবন-যৌবন শেষ করেও কিছুই পেলাম না। মিলটি স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার পর থেকেই আমরা একেবারেই বেকার হয়ে আছি। আমাদের পাওনাগুলো পরিশোধ করে দিলে পরিবার নিয়ে কিছু একটা করে খেয়েপরে বাঁচতে পারি।’
শাহাদাত মিয়ার মতো অনেকে ২৫ বছর বা তার বেশি সময় ধরে এই পাটকলে কাজ করেছেন। অনেকে কাজ করেছেন ১০ বছর বা তার বেশি সময়। পাটকল বন্ধ হওয়ায় বেকার হয়ে পড়ে এবং পাওনা টাকা না পেয়ে সবাই এখন পরিবার নিয়ে বিপাকে আছেন। এই শ্রমিকদের কথা, পাটকল বন্ধ হলেও কর্মকর্তারা বসে বসে লাখ লাখ টাকা বেতন তুলছেন। অন্যদিকে, শ্রমিকেরা কাজ হারিয়ে না খেয়ে মরার মতো অবস্থায় চলে যাচ্ছেন। এটা হতে পারে না।
স্থায়ী বা বদলি শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের ব্যাপারে আমরা সরকারের কাছে আবেদন করেছি। অনুমোদন হয়ে এলেই তাঁদের সব পাওনা পরিশোধ করা হবে।শাহাদাত হোসেন, মহাব্যবস্থাপক, ইউএমসি জুটমিল
ইউএমসি জুটমিলের সিবিএ সভাপতি শফিকুল ইসলাম মোল্লা বলেন, মিল বন্ধ ঘোষণার পর বেকার হওয়া জুটমিলের শ্রমিকেরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অবিলম্বে তাঁদের চূড়ান্ত পাওনার টাকা পরিশোধ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এ বিষয়ে ইউএমসি জুটমিলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘স্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা টাকা আমরা এরই মধ্যে পরিশোধ করেছি। অস্থায়ী বা বদলি শ্রমিকদের পাওনা টাকা এখনো পরিশোধ করা যায়নি। তাঁদের পাওনা পরিশোধের ব্যাপারে আমরা সরকারের কাছে আবেদন করেছি। অনুমোদন হয়ে এলেই তাঁদের সব পাওনা পরিশোধ করা হবে।’