মানসিক ভারসাম্যহীন নিপেন চন্দ্র প্রায় ৩০ বছর ধরে বাড়িতে আটকা রয়েছেন। পাঁচ বছর তাঁকে শিকলবন্দী রাখা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, অর্থাভাবে তাঁর উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না। মারমুখী আচরণের কারণে তাঁকে শিকলবন্দী করে রাখা হয়েছে।
নিপেন চন্দ্র (৪০) নওগাঁর রানীনগর উপজেলার ভান্ডারা গ্রামের মৃত নরেশ চন্দ্র পালের ছেলে। ছোটবেলায় নিপেন সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিলেন। পড়াশোনাতেও ভালো ছিলেন। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় হঠাৎ করে নিপেনের মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। একপর্যায়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন নিপেন।
নিপেনের বড় ভাই নিতাই চন্দ্র পাল বলেন, আর্থিক সংকট থাকার পরও বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে নিপেনের চিকিৎসা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো চিকিৎসায় সে ভালো হয়নি। দিনে দিনে তাঁর অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকে। তাঁকে বাড়ির বাইরে ছেড়ে দিলেই মানুষকে মারপিট, গালিগালাজ করাসহ নানা ধরনের অত্যাচার করেন। এ কারণে নিরুপায় হয়ে নিপেনের পায়ে লোহার শিকল দিয়ে একটি মাটির ঘরে রাখা হয়েছে।
নিতাই চন্দ্র পাল জানান, গ্রামের অনেকে বলেছিলেন, বিয়ে দিলে হয়তো নিপেন ভালো হতে পারেন। এমন ধারণা থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে নিপেনকে বিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর সাত বছরের একটি মেয়ে রয়েছে।
নিপেনের স্ত্রী শিখা রানী পাল বলেন, ‘বিয়ের পর নিপেন কিছুটা স্বাভাবিক আচরণ করলেও বর্তমানে তাঁর আচরণ সহ্য করার মতো নয়। অত্যাচরের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিনে দুই বেলা অন্ন জোটে না। স্বামীর চিকিৎসা করব কীভাবে? অর্থের অভাবে স্বামীর চিকিৎসা করাতে পারছি না। মেয়েকে নিয়ে আমি মানবেতর জীবন যাপন করছি। সবকিছুর জন্য মানুষের কাছে হাত বাড়াতে হয়। স্বামীর উন্নত চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবান মানুষসহ সরকারের সার্বিক সহযোগিতা চাই।’
উপজেলার কালীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘নিপেনের অসুস্থতার বিষয়টি শুনেছি। কিন্তু তাঁর সহযোগিতার বিষয়ে কেউ লিখিতভাবে আমাকে কিছু জানায়নি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে নিপেনের পাশে দাঁড়াব এবং তাঁর জন্য কিছু করার চেষ্টা করব।’