পাকা সেতুটি ২০১৭ সালের বন্যায় দেবে গেছে। এরপর ওই সময় পানির তোড়ে সেতুর দুই পাশের কাঁচা সংযোগ সড়ক ভেঙে গেলে জনচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে এলাকার লোকজন সেতুর দুই পাশে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সাঁকো নির্মাণ করে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল শুরু করেন।
ওই সাঁকো দিয়ে সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাসহ উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন অন্তত আট হাজার মানুষ। এ সেতু রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের আজমখাঁ গ্রামের পাশে মানাস নদে অবস্থিত।
উপজেলা প্রকৌশলীর (এলজিইডি) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এডিপির অর্থায়নে প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে নদের ওই স্থানে ১৮ ফুট দৈর্ঘ্যের ওই পাকা সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০১৭ সালের আগস্টে বন্যার সময় ওই সেতুর পশ্চিমাংশ পুরোটা দেবে নদে তলিয়ে যায়। পরে উভয় পাশের সংযোগ সড়কও পানির তোড়ে ভেঙে যায়।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, দেবে যাওয়া সেতুটির এক প্রান্ত পানিতে তলিয়ে আছে। দুই পাশের সংযোগ সড়ক ভেঙে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এলাকার লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সাঁকো নির্মাণ করে ঝুঁকি নিয়ে সেতুর ওপর দিয়ে উপজেলা সদরে যাওয়া–আসা করছেন।
টেপামধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আবদুল ওয়াহাব বলেন, ওই সেতুর পূর্ব দিকে কাউনিয়া উপজেলার আজমখাঁ, গনাই, হয়বৎখাঁ, কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ এবং রংপুরের পীরগাছা উপজেলার রামসিং গ্রাম রয়েছে। এসব গ্রামের লোকসংখ্যা প্রায় আট হাজার। এ ছাড়া সেতুটির পশ্চিমে দুটি হাট, দুটি মাধ্যমিক স্কুল, একটি মাদ্রাসা, তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা রয়েছে। ওই গ্রামগুলোর শিক্ষার্থী ও অন্য লোকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নড়বড়ে ওই সাঁকোর ওপর দিয়ে যাওয়া–আসা করছেন।
আজমখাঁ গ্রামের বাসিন্দা নাছের আলী বলেন, ‘ওঠামাত্রই সাঁকোটি নড়াচড়া করে। গত কয়েক বছরে সাঁকোর ওপর দিয়ে চলাচল করার সময় অনেক মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল আরোহী নদীতে পড়ে আহত হয়েছেন। এলাকার হাটবাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ উপজেলা সদরে যাওয়া–আসার আর কোনো বিকল্প পথ না থাকায় বাধ্য হয়ে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকোটির ওপর দিয়ে যাওয়া–আসা করছি।’
পীরগাছা উপজেলার রামসিং গ্রামের বাসিন্দা নুর ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘ওই ভাঙা সেতু ব্যবহার করা ছাড়া আমাদের গ্রামের অন্তত দুই হাজার মানুষের হাটবাজারে যাওয়া আসার কোনো বিকল্প পথ নেই।’
আজমখাঁ গ্রামের কৃষক এরশাদ মিয়া (৫৫), আবদুল আজিজ (৪৪), বিদ্যানন্দ গ্রামের আজগর আলীসহ (৬৮) অন্তত ১০ জন কৃষক বলেন, সেতুটি ভেঙে পড়ার পর সাঁকোর ওপর দিয়ে কোনো পণ্যবোঝাই গাড়ি পারাপার করা সম্ভব হয় না।
হয়বৎখাঁ গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রায় পাঁচ বছর ধরে সেতুটি ভেঙে পানিতে তলিয়ে থাকলেও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
বিদ্যানন্দ গ্রামের কলেজশিক্ষার্থী ইমরুল কায়েশ বলেন, অতিকষ্টে ওই ভাঙা সেতু ও সাঁকো মাড়িয়ে কাউনিয়া ডিগ্রি কলেজে যাতায়াত করতে হয়। অনেক সময় পা পিছলে নদে পড়ে গিয়ে বই–খাতা, ব্যাগসহ পোশাক ভিজে যায়।
টেপামধুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, ২০১৭ সালের বন্যায় মানস নদের ওপরের পাকা সেতুটি দেবে যায়। এতে পাঁচ গ্রামের আট হাজার মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। সমস্যাটি কয়েকবার উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় উপস্থাপন করেও কাজ হয়নি।
কাউনিয়ার উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘নদের ওই স্থানে নতুন করে সেতু নির্মাণের প্রস্তাব ২০২০ সালে ঢাকায় পাঠিয়েছি। অনুমোদন পাওয়া মাত্রই তা করে দেওয়া হবে।’