প্রচলিত চাকরির সুযোগ ছিল মাসুম প্রামাণিকের। কিন্তু তা না করে এখন করছেন ফ্র্রিল্যান্সিং। প্রথমে পাঁচ ডালার আয় দিয়ে শুরু করলেও এখন তাঁর মাসিক আয় প্রায় চার হাজার ডলার। তাঁর ‘স্টোরি আইটি’ নামের কোম্পানিতে কাজ করছেন অন্তত ১৬ তরুণ-তরুণী।
মাসুম নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া কালিকাপুর গ্রামের আবুল প্রামাণিক ও আছিয়া বেগম দম্পতির ছেলে।
মাসুমের সাফল্যের গল্পের শুরুটা ২০১৩ সালে। ছোটবেলা থেকেই নিজে কিছু করার অর্থাৎ উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবল ইচ্ছা ছিল তাঁর। মাধ্যমিকের পরে শুরু করেন টিউশনি। কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন একটা কোচিং সেন্টার। কিন্তু তাতে মন ভরেনি। পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে কম্পিউটার বিভাগে পড়ালেখার সুযোগ পেয়ে চলে যান সেখানে। স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন কম্পিউটারের ওপর ক্যারিয়ার গড়ার। কম্পিউটারে ডিপ্লোমা পাস করে ভর্তি হন উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে। কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
প্রথমে ডোল্যান্সার নামের একটি সাইটে কাজ শুরু করেন মাসুম। নতুন অ্যাকাউন্ট নেওয়ার জন্য গুনতে হয় পাঁচ হাজার টাকা। এক মাস পরে যখন টাকা হাতে পেলেন কিছুটা ভরসা পেলেন এবং নিজের সব জমানো টাকা দিয়ে শুরু করেন আরও কয়েকটি নতুন অ্যাকাউন্ট নিয়ে। দুই মাস ভালোই চলছিল। তবে ভুয়া কোম্পানির কাছে নিজের সর্বস্ব হারিয়ে হতাশার সাগরে ডুবতে হয় তাঁকে। কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। পুনরায় নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য শুরু করেন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের ওপরে রিসার্চ করা। সেখানে তিনি সফলতা পান। এরপর (মার্কেটপ্লেস) ফাইবার ও আপওয়ার্কের পাশাপাশি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, কারিগরি সেবা এবং ওয়েবডিজাইনে নিজেকে দক্ষ করে তোলেন। ওডেস্ক নামের একটি কোম্পানির সাইটে অ্যাকাউন্ট করে আবারও শুরু করেন ফ্র্রিল্যান্সিং। ঠিক দুই মাস পর পাঁচ ডলারের একটি কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করেন তিনি। এই পাঁচ ডলারই ঘুরিয়ে দিয়েছে তাঁর জীবনের মোড়।
ফ্র্রিল্যান্সার মাসুম জানান, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চার বছরে ফ্রিল্যান্সিংয়ের পাশাপাশি প্রশিক্ষক হিসেবে চাকরি করেছেন স্কিলস টু সাক্সিসিড, লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রোজেক্ট, স্কিলস ডেভেলপমেন্ট প্রোজেক্ট প্রকল্পে। ২০১৭ সালে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় একটি টিম নিয়ে আবার নতুন উদ্যমে শুরু করেন, তবে এবার লক্ষ্য একটু বড়। তিনি একটি ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি করতে চান। ২০১৭ সালের শেষের দিকে শুরু হয় এজেন্সি করার লক্ষ্য নিয়ে আবারও ফ্রিল্যান্সিং পেশায় পুরোদমে যাত্রা। শুরুটা কঠিন হলেও থেমে যাননি। বরং টিমকে দিয়েছেন সাহস। নিজেও ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। স্টোরি আইটি নামে তার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানে বর্তমান কাজ করছেন ১৬ জন তরুণ-তরুণী। মাসুমের হাত ধরে তাঁরাও একেকজন উদ্যোক্তা হতে চান।
মাসুম ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ এই দুই বছরে আপওয়ারকে ২৫০টি, ফাইবারে ২০০টি এবং স্থানীয় ১০০টি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করেছেন। বর্তমানে মার্কেটপ্লেসের বাইরে কানাডিয়ান এজেন্সি সিএনএস, আমেরিকান এজেন্সি ব্রাইট হাউস, অস্ট্রেলিয়ান এজেন্সি ভেট এসই এর সঙ্গে কাজ করছেন। এ ছাড়া এ্যাফিলিয়েট, এডসেন্স সাইট করেছেন ২০টির বেশি।
মাসুম বলেন, ‘প্রথম যে দিন পাঁচ ডলার আয় করেছিলাম সেদিনের কথা আজও বারবার মনে পড়ে। দিনে প্রায় পাঁচবার প্রোফাইলে গিয়ে রিভিউটা দেখতাম, কত ডলার যোগ হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আইটি সেক্টরে বর্তমানে অনেক তরুণ-তরুণী আসছে। তাদের উদ্দ্যেশে একটাই কথা নিজেকে দক্ষ করে লেগে থাকতে হবে, সাফল্যে একদিন ধরা দেবেই।’