ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পাঁচ ঘণ্টা পর আজ রোববার বেলা ১১টা থেকে যান চলাচল শুরু হয়েছে। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল ইসলাম খান বেলা ১১টায় দাউদকান্দির পেন্নাই ফকিরবাড়ি এলাকায় এসে অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলার পর যান চলাচল শুরু হয়। এ সময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সেলিম শেখ উপস্থিত ছিলেন।
সারা দেশে আলেম–ওলামাদের ওপর অতর্কিত হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে রোববার সকাল ছয়টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম অবরোধ করে রাখেন অবরোধকারীরা। অবরোধের সময় ‘আমার ভাইদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’ স্লোগান নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক, ছাত্র, তৌহিদি জনতা ও হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে হরতাল কর্মসূচি পালন করেন।
দাউদকান্দি টোলপ্লাজা এলাকা থেকে ধীতপুর পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন অংশে বিদ্যুতের খুঁটি, গাছ, ঢালা, পিলার ও পাথর ফেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখেন তাঁরা। বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ, অ্যাম্বুলেন্স, ব্যক্তিগত গাড়িসহ অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে।
যানবাহনের চালকেরা অনেকে ভয়ে মহাসড়কে যানবাহন রেখে পালিয়ে যান।
চাঁদপুরের মতলব থেকে ঢাকাগামী জৈনপুরী পরিবহনের বাসের যাত্রী ঢাকার তিতুমীর কলেজের এম এ শেষ বর্ষের (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) ছাত্র ও মতলব দক্ষিণের চাপাতলী গ্রামের বাসিন্দা মো. রাসেল এবং একই বাসের যাত্রী মতলব দক্ষিণের নবকলস গ্রামের বাসিন্দা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের উচ্চমান সহকারী কামরুজ্জামান বাড়ি থেকে রোববার সকালে ঢাকায় রওনা হয়। দাউদকান্দির গাজীপুর এলাকায় যানজটে আটকে পড়ে দুর্ভোগে পড়েন তাঁরা। পরে সকাল নয়টায় পায়ে হেঁটে ঢাকায় রওনা দেন তাঁরা। এ সময় বাসচালক ও সুপারভাইজার ভাড়ার টাকা ফেরত না দিয়েই পালিয়ে যান।
সকাল ছয়টা থেকে দাউদকান্দি টোলপ্লাজায় যানজটে আটকে থেকে সকাল সাড়ে নয়টায় পায়ে হেঁটে কুমিল্লায় রওনা দেন কুমিল্লার চাকরিজীবী উজ্জ্বল ও তাঁর চাচাতো বোন শাওনা। তাঁরা দুর্ভোগের অভিজ্ঞতার কথা জানান এই প্রতিবেদককে।
দাউদকান্দির চররায়পুর গ্রামের গৃহবধূ জয়নব বিবি বলেন, ‘হরতালের কারণে রোগীর খাবার নিয়ে মহাসড়কের তিন কিলোমিটার সড়ক লাঠিমিছিলের মধ্যে ভয়ে ভয়ে অতিক্রম করেছি।’
দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাকমো মিতা বলেন, হরতালের কারণে দাউদকান্দি সদর থেকে ১০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে পৌঁছাতে হয়েছে।
এদিকে ঢাকা-আমিরাবাদ-কচুয়া সড়কের দাউদকান্দির মালাখালা, পিপিয়াকান্দি, রায়পুর, পাঠানতলী ও নতুনবাজার এলাকায় টায়ার ও কাঠ জ্বালিয়ে অবরোধ করেন অবরোধকারীরা। এ সময় সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সড়ক-মহাসড়কের শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখতে সকাল থেকে মহাসড়কের দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডে কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মো. জুয়েল রানা, দাউদকান্দি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, র্যাব-১১, কুমিল্লার ডিবি পুলিশ, কুমিল্লার রিজার্ভ পুলিশের দল অবস্থান করেন।
দাউদকান্দির ইউএনও কামরুল ইসলাম খান বলেন, ‘দাউদকান্দির কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শান্তিপূর্ণ অবস্থা ছিল। হেফাজতের নেতা-কর্মী, বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক আমার কথা শুনেছে।’