করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের পাঁচটি রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে আগামী ৬ জুন পর্যন্ত ‘কঠোর লকডাউন’ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এ দুই উপজেলার অন্য শরণার্থীশিবিরগুলোতে চলমান লকডাউন আরও ছয় দিন বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের ২, ৫, ৬ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডকে চিহ্নিত করে ‘রেড জোন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান হায়াত, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজাম উদ্দিন আহমেদ ও টেকনাফের ইউএনও পারভেজ চৌধুরী আজ মঙ্গলবার রাতে বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, শরণার্থীশিবিরে কয়েক দিন ধরে করোনার সংক্রমণ দিন দিন বেড়ে যাওয়ার কারণে পাঁচটি শিবিরে কঠোর লকডাউনের পাশাপাশি ৩৪টি রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে আরও ছয় দিনের জন্য লকডাউনের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
উখিয়ার ইউএনও নিজাম উদ্দিন আহমেদ ও টেকনাফের ইউএনও পারভেজ চৌধুরী জানান, জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে দুটি উপজেলায় প্রথমে ২১ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত লকডাউন দেওয়া হয়েছিল। করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে না আসায় আগামী ৬ জুন পর্যন্ত সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি ও রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় এই দুই উপজেলায় লকডাউন বাস্তবায়নে কড়াকড়ি অবলম্বন করা হবে। শুরু থেকে ৩১ মে পর্যন্ত উখিয়ায় ১ হাজার ২৫০ জন এবং টেকনাফে ৯২৫ জন স্থানীয় বাসিন্দা করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের ২, ৫, ৬ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডকে চিহ্নিত করে ‘রেড জোন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
কয়েক মাস ধরে প্রতিদিন এক থেকে দুজনের করোনা শনাক্ত হলেও হঠাৎ করে রোহিঙ্গার শিবিরগুলোতে দৈনিক ২০ থেকে ৪৫ জনের মতো করোনা পজিটিভ রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী চিকিৎসক আবু তোহা এম আর ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকে এ বিশাল রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির নিয়ে সবাই উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলেন। তবে হঠাৎ করে কয়েক দিন ধরে জেলার করোনায় আক্রান্তের অধিকাংশই রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরগুলোর বাসিন্দা দেখা যাচ্ছে। কয়েক মাস ধরে প্রতিদিন এক থেকে দুজনের করোনা শনাক্ত হলেও হঠাৎ করে রোহিঙ্গার শিবিরগুলোতে দৈনিক ২০ থেকে ৪৫ জনের মতো করোনা পজিটিভ রোগী পাওয়া যাচ্ছে। ৩১ মে সোমবার পর্যন্ত রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ১ হাজার ২১৭ জন রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জন মারা গেছেন। গতকাল সোমবার রাতে আরও ২৪ জন রোহিঙ্গা করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন।
চিকিৎসক আবু তোহা আরও বলেন, কক্সবাজারে ৩৪টি, নোয়াখালীর ভাসানচরে ১টিসহ মোট ৩৫টি রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির রয়েছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ভাসানচর কোনো রোহিঙ্গার করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়নি। কক্সবাজারের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরের মধ্যে পাঁচটি উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প-২ ডব্লিউ, কুতুপালং ক্যাম্প-৩, কুতুপালং ক্যাম্প-৪, জামতলি ক্যাম্প-১৫ এবং টেকনাফের লেদা ক্যাম্প-২৪ রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে কঠোর লকডাউন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য শিবিরেও সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনা করে আরও ছয় দিনের জন্য লকডাউন বাড়ানো হয়েছে।
জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ে অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামসুদ্দৌজা বলেন, সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ক্যাম্পগুলোতে লকডাউন বৃদ্ধি করা হয়েছে। ক্যাম্পে চিকিৎসা, খাদ্যপণ্যসহ জরুরি কার্যক্রম ছাড়া সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।