পলাশবাড়ীতে অচেনা প্রাণীর আক্রমণ থামেনি, নতুন আক্রান্ত ৩

অচেনা প্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে লাঠি হাতে পাহারা দিচ্ছেন গ্রামবাসী। শুক্রবার বিকেলে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশামত কেঁওয়াবাড়ি গ্রামের আকবরের মোড়ে
প্রথম আলো

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার ছয়টি গ্রামে অচেনা সেই প্রাণীর আক্রমণ এখনো থামেনি। গত তিন দিনে এই প্রাণীর আক্রমণে আরও ৩ জন আহত হয়েছেন। এ নিয়ে আহতের সংখ্যা দাঁড়াল ১১। ফলে এসব গ্রামের মানুষের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। কৃষকেরা মাঠে কাজে যেতে ভয় পাচ্ছেন।

এলাকাবাসী জানান, দেড় মাস ধরে পলাশবাড়ী উপজেলার ছয়টি গ্রামে অচেনা এই প্রাণীর আক্রমণ শুরু হয়েছে। গ্রামগুলো হচ্ছে তালুক কেঁওয়াবাড়ি, হরিনাথপুর, কিশামত কেঁওয়াবাড়ি, খামার বালুয়া, দুলালেরভিটা ও তালুকজামিরা। এই সময়ে এই প্রাণীর আক্রমণে ১ জনের মৃত্যু এবং অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন।

আজ শুক্রবার বিকেলে গ্রামগুলো ঘুরে দেখা যায়, মানুষের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। বের হলেও কয়েকজন লাঠি হাতে বের হচ্ছেন। দুপুরের পর থেকেই এলাকা লোকশূন্য হয়ে পড়ছে। বিকেলে লোকজন বাড়ির উঠানে লাঠি হাতে বসে থাকছেন। পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা বলেন, ওই সব গ্রামের মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। আতঙ্ক কাটাতে পুলিশও টহল দিচ্ছে।

এলাকাবাসী জানান, গত বুধবার সকাল থেকে আজ শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নতুন করে তিনজন ওই প্রাণীর আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে কিশামত কেঁওয়াবাড়ি গ্রামের আফসার আলীর (৫০) পায়ে, খামার বালুয়া গ্রামের আবদুল হালিমের (৪৫) হাতে এবং দুলালেরভিটা গ্রামের ছাব্বির শেখের (৫২) পায়ে কামড় দিয়ে পালিয়ে যায় ওই প্রাণী। আহত ব্যক্তিরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁরা জানান, মাঠে কাজে গিয়েই তাঁরা আক্রমণের শিকার হন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভাষ্য, প্রাণীটি দেখতে শেয়ালের মতো। কেউ বলছেন, নেকড়ে বা হায়েনার মতো। প্রাণীটির মাথা ও লেজ আকারে বড়। প্রাণীটি ঝোপজঙ্গল ও ধানের জমি থেকে বেরিয়ে এসে আক্রমণ করছে। এ কারণে সম্প্রতি একটি শিয়ালকে পেয়ে মেরেও ফেলেন এলাকাবাসী।

এলাকাবাসী জানান, দেড় মাস ধরে পলাশবাড়ী উপজেলার ছয়টি গ্রামে অচেনা এই প্রাণীর আক্রমণ শুরু হয়েছে। এই সময়ে এই প্রাণীর আক্রমণে ১ জনের মৃত্যু এবং অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন।

কিশামত কেঁওয়াবাড়ি গ্রামের কৃষক আজাদুল ইসলাম (৬০) বলেন, গ্রামাঞ্চলে এখন উঠতি আমন ধানের জমি পরিচর্যার সময়। এ জন্য কৃষকেরা সাধারণত সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জমিতে কাজ করে থাকেন। কিন্তু এই প্রাণী বিকেল হতে না হতেই বেরিয়ে আসে। তাই দুপুরের পরপরই তাঁরা জমির কাজ শেষ করেন। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরেন। একই গ্রামের কৃষক রফিক মিয়া (৪৮) বলেন, আগে একাই জমিতে কাজে যেতেন। এখন চার-পাঁচজন মিলে যান। কেউ কাজ করেন, কেউ লাঠি হাতে জমির আইলে বসে থাকেন। কখন প্রাণীটি বেরিয়ে আসে।

দুলালেরভিটা গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন (৩৫) বলেন, রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বের হতেও তাঁরা ভয় পাচ্ছেন। লাঠি ও হারিকেন হাতে ঘর থেকে বের হচ্ছেন। কেউ প্রাকৃতিক কাজ সারেন, কেউ লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকেন।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মাসুদার রহমান আজ সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, শিয়াল, কুকুর, বিড়ালসহ হিংস্র বন্য প্রাণীরা জলাতঙ্ক রোগ সৃষ্টিকারী র‌্যাবিস ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করে। এসব প্রাণী যখন নিজেরা জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়, তখন তারা মানুষ ও যেকোনো প্রাণীকে কামড় দিলে তারাও জলাতঙ্কে আক্রান্ত হতে পারে। পলাশবাড়ীর ওই গ্রামগুলোতে যেসব প্রাণী মানুষকে আক্রমণ করছে, সেগুলো হয়তো জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে। কুকুরের মতো শিয়ালেরও জলাতঙ্ক হলে তারা পাগল হয়ে থাকে। সেগুলোই হয়তো মানুষ ও গরু-ছাগলকেও আক্রমণ করছে। তবে ঠিক কোন প্রাণী আক্রমণ করছে, তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মানুষ বা পশু—যাকেই এ ধরনের প্রাণী কামড় দিক, তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দ্রুত জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা দিতে হবে।