সিলেটে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু

পলাতক এসআই আকবরকে ধরতে সহায়তা চান পুলিশ কমিশনার

নিহত রায়হান আহমদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলছেন মহানগর পুলিশের নবনিযুক্ত কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ। মঙ্গলবার রাতে নগরের আখালিয়ায়
প্রথম আলো

সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে মো. রায়হান আহমদকে (৩৪) নির্যাতন করে হত্যার ঘটনায় বরখাস্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঞাকে ধরিয়ে দিতে জনগণের সহায়তা চেয়েছেন মহানগর পুলিশের (এসএমপি) নবনিযুক্ত কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ। মঙ্গলবার রাতে নগরের আখালিয়ায় নিহত রায়হান আহমদের বাড়িতে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটিকে ‘অপ্রত্যাশিত’ ও ‘অনভিপ্রেত’ উল্লেখ করে পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, ‘এ ঘটনায় পুলিশ সদস্যরা জড়িত থাকায় আমি লজ্জিত। এর মধ্যে পুলিশি হেফাজত থেকে বরখাস্ত এসআই আকবরের পালিয়ে যাওয়া আরও লজ্জার। আকবরকে ধরতে বাহিনীর অনেকগুলো ফোর্স কাজ করছে। তাঁকে ধরিয়ে দিতে জনগণও সহায়তা করতে পারেন। জনসাধারণের মধ্যে যদি কেউ আকবরের অবস্থান শনাক্ত করতে পারেন বা ধরতে পারেন, তাহলে দ্রুত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়েই আমি সিলেটে এসেছি।’

সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রাতভর নির্যাতনে ১১ অক্টোবর রায়হান আহমদের (৩৪) মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে কোতোয়ালি থানায় রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন। মামলায় ফাঁড়ির দুই বরখাস্ত কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুন অর রশিদকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবরসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ১২ অক্টোবর বরখাস্ত হওয়ার পর থেকে আকবর পলাতক। পুলিশি হেফাজত থেকে আকবরের পলায়নের পর সমালোচনার মুখে সরানো হয় পুলিশ কমিশনার পদে থাকা গোলাম কিবরিয়াকে। গত বৃহস্পতিবার তাঁর জায়গায় পুলিশের স্পেশাল প্রটেকশন ব্যাটালিয়নের (এসপিবিএন) ডিআইজি পদে থাকা মো. নিশারুল আরিফকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

রায়হানদের বাড়ির উঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ

মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখা জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিলেট পৌঁছান নতুন পুলিশ কমিশনার মো. নিশারুল। এরপর তিনি হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরান (রহ.)–এর মাজার জিয়ারত করে নগরীর আখালিয়া এলাকার নিহারিপাড়ায় রায়হানের বাড়িতে যান। রাত সাড়ে আটটা থেকে নয়টা পর্যন্ত তিনি রায়হানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। এরপর বাড়ির উঠানে প্রেস ব্রিফিং করেন। এ সময় নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার পরিতোষ ঘোষ, অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) কামরুল আমীনসহ নগর পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ কমিশনার বলেন, রায়হানকে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যুর মামলায় প্রধান অভিযুক্ত বরখাস্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঞাকে ধরতে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। অনেকগুলো বাহিনী তাঁকে ধরার চেষ্টা করছে। যেসব পুলিশ সদস্য তাঁকে পালাতে সহায়তা করেছেন, তাঁদেরও চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আানা হবে। অপরাধীর প্রধান পরিচয় সে অপরাধী। সে কোন বাহিনীর সদস্য, এটা বিবেচ্য নয়।

পলাতক আকবরের বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন, মসির চেয়ে অসি বড় হলে তো চলবে না। আকবরের এসব কর্মকাণ্ড যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন, সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।