কক্সবাজারের চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ওসমান গণির জন্মদিন ছিল ২ মার্চ। ওই দিন তিনি নিজ কার্যালয়ে কেক কেটে জন্মদিন পালন করেন। জন্মদিন উপলক্ষে পরেছিলেন আকাশি রঙের সাদা পাঞ্জাবি। কিন্তু হত্যাচেষ্টা মামলার পলাতক আসামিদের সঙ্গে কেক কেটে জন্মদিন পালনের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। থানার মধ্যে পলাতক আসামিদের সঙ্গে ওসির জন্মদিন পালন, আসামিদের কেক খাইয়ে দেওয়া ও আসামিদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি দেখে সমালোচনা করছেন অনেকে।
আদালত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল রাতে অস্ত্রধারী একদল তরুণ চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য তারেকুল ইসলামকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন এবং তাঁর মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায় তারেকুলের ছোট ভাই তানজীমুল ইসলাম বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় উপজেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাবেক সাধারণ সম্পাদক আরহান মাহমুদ ওরফে রুবেলকে প্রধান আসামি করে ১০ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। কয়েক মাস আগে আদালতে ওই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন।
পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামি আরহান মাহমুদ ওরফে রুবেলসহ অন্যরা আত্মগোপনে আছেন। তাঁদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ পলাতক আসামিদের নিয়ে স্বয়ং ওসি থানায় কেক কেটে জন্মদিন পালন করলেন। এ নিয়ে পুলিশের ভেতরেও কানাঘুষা চলছে। এ ঘটনায় মামলার বাদীপক্ষ ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২ মার্চ বিকেলে হত্যাচেষ্টা মামলার ১ নম্বর পলাতক আসামি আরহান মাহমুদ, ৬ নম্বর আসামি মো. আলিফসহ ছাত্রলীগের ১৪ জন তরুণ কেক নিয়ে ওসির কক্ষে প্রবেশ করেন। এরপর কেক কেটে ওসির জন্মদিন পালন করা হয়। ওসিকে কেক খাইয়ে দেন আসামিরা। ওসিও তাঁদের নিজ হাতে কেক খাইয়ে দেন। তোলা হয় অনেক ছবি।
ওই দিন সন্ধ্যা ৭টা ৫৯ মিনিটে আরহান মাহমুদ ওরফে রুবেল নিজের ফেসবুক আইডি থেকে ওসিকে ট্যাগ দিয়ে একটি পোস্ট দেন। পোস্টে তিনি (আরহান) লেখেন, ‘ছোট্ট আয়োজনে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে (ওসি ওসমান)। আজকের এই শুভ জন্মদিনে চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা রইল প্রিয় ভাই।’ অন্য আসামি মো. আলিফও তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট দেন।
আরহান মাহমুদের করা ফেসবুক পোস্টের ছবিতে দেখা গেছে, ওসি ওসমান গণি মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর বাঁয়ে কালো কোট পরা আরহান, আলিফসহ কয়েকজন ওসির মুখে জন্মদিনের কেক তুলে দিচ্ছেন। ওসিও আরহানকে কেক খাইয়ে দেন। এরপর আরহানের সঙ্গে যাওয়া তরুণদের নিয়ে ওসি ফটোসেশন করেন।
জানা গেছে, ওসি ওসমান চকরিয়া থানার এসআই ছিলেন। তাঁর বাড়ি চকরিয়ার পাশে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার বড়হাতিয়া ইউনিয়নে।
মামলার বাদী তানজীমুল ইসলাম এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে তিনি আসামিদের নিয়ে ওসির জন্মদিন পালনের ছবি ফেসবুকে দেখে অবাক। তিনি বলেন, ‘আমরা ন্যায় বিচার চাই।’
পলাতক আসামিদের নিয়ে জন্মদিন পালনের বিষয়ে ওসি ওসমান গণি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার জানতে পেরেছি, দুজনের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে। এর আগে জানতাম না, ছাত্রলীগের ওই ছেলেদের বিরুদ্ধে মামলা আছে। ছাত্রলীগের কিছু ছেলেপেলে ধরেছে জন্মদিন পালন করবে, না করতে পারিনি। এখন ওই আসামিদের ধরার চেষ্টা চলছে।’
ওসি ওসমান গণি আরও বলেন, ‘চকরিয়া ছাত্রলীগে দুটি পক্ষ। তাদের একটি পক্ষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের জন্মদিনের কেক কাটার ছবি নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’