পরিবারের অভিযোগ, প্রতিপক্ষরা তাঁকে খুন করিয়েছে

নূর আলী শেখ
নূর আলী শেখ

যশোরের অভয়নগর উপজেলায় শুভরাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নূর আলী শেখ (৪৫) হত্যাকাণ্ডের ঘটনার আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত মামলা হয়নি। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, ব্যক্তিগত শত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হতে পারে।

তবে নূর আলীর পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজ দলীয় প্রতিপক্ষের লোকজন ভাড়া করা সন্ত্রাসীদের দিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

নূর আলী উপজেলার শুভরাড়া গ্রামের আসির আলী শেখের ছেলে। তিনি ওই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সদস্যও ছিলেন।

নূর আলীর পরিবার ও এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার শুভরাড়া গ্রামের বাবুরহাটে নূর আলী শেখের একটি নিজস্ব কার্যালয় রয়েছে। কার্যালয়টি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গতকাল রোববার রাতে তিনি ওই কার্যালয় থেকে মোটরসাইকেলে করে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে শুভরাড়া গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন।

মোটরসাইকেল চালাচ্ছিল নূর আলীর ছেলে ইব্রাহিম শেখ (১৬)। তিনি মোটরসাইকেলের পেছনের দিকে বসেছিলেন। এ সময় ওই এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। রাত ৮টা ২ মিনিটের দিকে মোটরসাইকেলটি কার্যালয় থেকে ১০০ গজ দূরে একটি বটগাছের নিচে পৌঁছায়। এ সময় কয়েকজন অস্ত্রধারী চলন্ত অবস্থায় ইব্রাহিমের বাঁ পায়ে দুটি এবং বাঁ হাতে একটি গুলি করে। এতে তাঁরা মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে মাটিতে পড়ে যান। এরপর সন্ত্রাসীরা নূর আলীর মাথার পেছনে ডান পাশে গুলি করে। গুলিটি মাথার সামনে দিয়ে বেরিয়ে যায়। এতে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন। পরে আহত ইব্রাহিমকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আজ সোমবার সকালে উপজেলার শুভরাড়া গ্রামের নূর আলী শেখের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চলছে শোকের মাতম। বুক চাপড়ে কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন স্ত্রী তহমিনা বেগম। মা, ভাই, বোনসহ অন্য স্বজনরা কাঁদছিলেন। তাঁদের আহাজারিতে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না প্রতিবেশী ও ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই বাড়িতে আসা নারী-পুরুষেরা।

কাঁদতে কাঁদতে নূরের স্ত্রী তহমিনা বলেন, ‘আমাদের পাড়ার মুরাদ শেখ চার লাখ টাকা দিয়েছে সন্ত্রাসীদের। ইকবাল মোল্লা, মুছা গাজী, মুরাদ শেখ, হুমায়ুন মোল্লা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। দলাদলি, মেম্বরের ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। আমার স্বামীর আর কোনো দোষ নেই। আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’

নূর আলী শেখের বড় ভাই রুহুল আমিন শেখ বলেন, ‘নূর আলী শেখ একসময় ভ্যান চালাতেন। দিনমজুরও ছিলেন। পরে কাঠের ব্যবসা করে সংসারে সচ্ছলতা আনেন। গত নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ইউপি সদস্য হন। তিনি জনপ্রিয় মেম্বর ছিলেন। এবারও তিনি বিপুল ভোটে মেম্বর হতেন। গতকাল সকাল ১০টার দিকে তিনি আমাকে বলেন, ‘কিছু লোক তাঁকে খুন করতে চায়। মুরাদ শেখ ও মুসা গাজী দুজনে মিলে বিলের মধ্যে সন্ত্রাসীদের টাকা দিয়েছে। আমি ভাইকে সাবধানে চলতে বলি। এটাই তাঁর সঙ্গে আমার শেষ কথা। মুসা গাজী মেম্বার পদে দাঁড়াতে চান। এ জন্য ও আমার ভাইকে খুন করিয়েছে। তাঁর সঙ্গে ইকবাল মোল্যা, মুরাদ শেখ ও হুমায়ুন মোল্লা রয়েছে। তাঁরা আওয়ামী লীগের এক পক্ষের সঙ্গে আর আমার ভাই ছিলেন অপর পক্ষের সঙ্গে। তিনি এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডে সব সময় নেতৃত্বে থাকতেন।’

অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান আজ দুপুরে বলেন, ‘নূর আলী শেখের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।’

ওসি আরও বলেন, প্রাথমিক তদন্তের ওপর ভিত্তি করে ধারণা করা হচ্ছে, পূর্বশত্রুতার জের ধরে হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তবে সেটা রাজনৈতিক নয়, ব্যক্তিগত শত্রুতা। হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।