পদ্মা সেতু ঘিরে ব্যবসা

পরিবহন খাতে বিনিয়োগ ২০০ কোটি টাকা

প্রাথমিকভাবে ২৫০টি বাস শরীয়তপুর থেকে ঢাকার গুলিস্তান, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, ভুলতা, গাউছিয়া ও নারায়ণগঞ্জে বাসগুলো চলাচল করবে।

শরীয়তপুর জেলার মানচিত্র
শরীয়তপুর জেলার মানচিত্র

যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত পদ্মা সেতু। আগামী মাসের শেষের দিকে এটি খুলে দেওয়া হবে। সেতুকে ঘিরে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। ঢাকার খুব কাছের জেলা শরীয়তপুর। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-শরীয়তপুরে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ। পদ্মা সেতু হওয়ায় নতুন করে পরিবহন খাতে বিনিয়োগ করছেন শরীয়তপুরের ব্যবসায়ীরা। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে বাস চলাচলের জন্য তাঁরা অন্তত দুই শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। সেতুর উদ্বোধনের দিনেই নতুন বাস দিয়ে যাত্রী পরিবহন শুরু করতে চান ব্যবসায়ীরা।

শরীয়তপুর সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে ঢাকা-শরীয়তপুরে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ। এ জেলার বাসিন্দারা নৌপথ দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করেন। পদ্মা সেতু চালুর খবরে শরীয়তপুর সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ ও কয়েকটি পরিবহন কোম্পানি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে সরাসরি বাস চালানোর উদ্যোগ নেয়। ব্যবসায়ীরাও এ জন্য নতুন গাড়ি প্রস্তুত করছেন। ইতিমধ্যে ভলভো, আইচার, অশোক লিলেন্ড, টাটা গাড়ির (বাস) চেসিস কেনা হয়েছে। শরীয়তপুর ছাড়াও ঢাকা ও সাভারে চলছে বাস প্রস্তুতের কাজ।

সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি ফারুক আহম্মেদ তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী দিনে বাস চালানোর প্রস্তুতি নিয়ে তাঁরা এগোচ্ছেন। ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কে যাঁদের রুট পারমিট আছে, তাঁরাই নতুন বাস নামাচ্ছেন। শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস কোম্পানি, পদ্মা ট্রাভেলস, শরীয়তপুর পরিবহন ও গ্লোরী পরিবহন রুট পারমিট নিয়ে নতুন বাস প্রস্তুত করছে। অন্য কেউ বাস চালাতে চাইলে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে রুট পারমিট নিতে হবে বলে তিনি জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস প্রাইভেট কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠান খুলেছে সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ। তারা ৪০টি নতুন বাস প্রস্তুত করছে। এ ছাড়া পদ্মা ট্রাভেলস, শরীয়তপুর পরিবহন ও গ্লোরী পরিবহন ঢাকার সঙ্গে বাস চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিটি কোম্পানি নতুন বাস আনার পরিকল্পনা করছে। তাদের মধ্যে পদ্মা ট্রাভেলস ও শরীয়তপুর পরিবহনের কয়েকটি বাস ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া পর্যন্ত চলাচল করছে। কোম্পানিগুলো প্রাথমিকভাবে ২৫০টি বাস প্রস্তুত করছে। যার একেকটিতে খরচ পড়ছে ৭০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা। জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে ঢাকার গুলিস্তান, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, কমলাপুর, সায়েদাবাদ ও নারায়ণগঞ্জে এগুলো চলাচল করবে।

শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস প্রাইভেট কোম্পানির পরিচালক আবদুল খালেক পালোয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হলে ব্যবসা বাড়বে—এই স্বপ্ন নিয়ে দীর্ঘদিন লোকসানে থেকেও ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছি। অনেক কষ্ট করে ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। পদ্মা সেতু যেদিন খুলবে, সেদিন থেকেই আমরা ঢাকায় যাত্রী পরিবহন করতে চাই।’

শরীয়তপুর জেলা শহরের বাসিন্দা রেজাউল করিম (২৮) ব্যবসার কাজে সপ্তাহে চারবার ঢাকায় যান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি জীবনে কখনো শরীয়তপুর থেকে সরাসরি বাসে ঢাকা যাইনি। অনেক দুর্ভোগ ও ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করি। পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে। এখন জেলা শহর থেকে দুই ঘণ্টায় ঢাকায় যাব। ভাবলেই কেমন যেন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে।’

পদ্মা ট্রাভেলসের চেয়ারম্যান ও নড়িয়া পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিনেই তাঁরা বাস সার্ভিস চালু করতে চান। পরীক্ষামূলকভাবে তাঁদের ১২টি বাস শিমুলিয়া পর্যন্ত চলছে।

শরীয়তপুর পরিবহনের পরিচালক আরশাদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের কোম্পানির এসি ও নন-এসি বাস চলবে।’

গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আইচারের বিক্রয় কর্মকর্তা নকুল চন্দ্র হালদার বলেন, পদ্মা সেতু ঘিরে ঢাকায় নতুন বাস চালাতে পরিবহনমালিকেরা তাঁদের কাছ থেকে ইঞ্জিনসহ চেসিস কিনছেন। কেউ নগদে, আবার কেউ কিস্তিতে নিচ্ছেন। ভালো সাজসজ্জার পাশাপাশি বডি বানিয়ে নিচ্ছেন। যাত্রীরা নতুন সেতু দিয়ে নতুন বাসে যাতায়াত করতে পারবেন।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে ২ শতাংশের ওপরে জিডিপি বাড়বে। ইতিমধ্যে এর প্রভাব শুরু হয়ে গেছে। পরিবহন খাতে শতকোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। বিভিন্ন ব্যবসায় আরও বিনিয়োগ হচ্ছে।