পরিচিত কেউ সিতারাকে হত্যা করেছেন, ধারণা স্বজনদের

পিরোজপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহে সোমবার রাতে সিতারা হালিমের জানাজা হয়
ছবি: প্রথম আলো

পিরোজপুর শহরের সিআইপাড়ায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আমীর খসরুর মা সিতারা হালিমকে (৭৫) পরিচিত কেউ চুরির উদ্দেশ্যে ঘরে ঢুকে খুন করে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন পরিবারের সদস্যরা।

গতকাল সোমবার সকালে বাড়ির দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষের মেঝে থেকে সিতারা হালিমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে আমীর খসরু বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় হত্যা মামলাটি করেন।

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, সিতারা হালিম বাড়ির দোতলায় একা থাকতেন। বাড়িতে বিভিন্ন সময়ে পরিচিতজন ও কাজের জন্য রাজমিস্ত্রিদের যাওয়া–আসা ছিল। বাড়িতে কেউ গেলে সিতারা হালিম প্রথমে ঘরের দরজা খুলে কলাপসিবল গেটের তালা খুলতেন।

স্বজনদের ধারণা, গত রোববার রাতে পরিচিত কেউ চুরির উদ্দেশ্যে সিতারা হালিমের বাড়িতে যায়। এরপর কলবেল বাজালে সিতারা হালিম ঘরের দরজা খুলে দেন। ঘরে ঢুকে চোর তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করে স্বর্ণালংকার ও টাকা লুট করে পেছনের দরজার তালা খুলে পালিয়ে যায়।

সিতারা হালিমের বড় জামাতা পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের উপাধ্যক্ষ মজিবর রহমান বলেন, ‘ঘরের একটি কক্ষে থাকা ট্রাংকের তালা ভাঙা, আলমারিতে থাকা জামাকাপড় ছড়ানো–ছিটানো এবং ঘরের মালামাল তছনছ অবস্থায় পাওয়া গেছে। চোরেরা আমার শাশুড়িকে হত্যা করে ঘর থেকে নগদ টাকা ও গয়না নিয়ে গেছে।’

ঘটনার পর ওই বাড়ির পেছনের দরজা খোলা ছিল বলে জানিয়েছেন পিরোজপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থান্ডার খায়রুল হাসান। তিনি বলেন, ‘বাড়ির দোতলার কলাপসিবল গেটের তালা খোলা এবং দরজা ভেতর থেকে আটকানো ছিল। আমাদের ধারণা, খুনি সামনের দরজা দিয়ে ঢুকে পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে যায়। যেহেতু রাত ১১টার পর বাড়ির নিচতলার কলাপসিবল গেট আটকানো হয়। এ কারণে খুনি হয়তো সামনের দরজা দিয়ে বের হতে পারবে না জেনে পেছনের দরজার তালা খুলে পালিয়ে যায়।’

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, রোববার রাত আটটার পর থেকে গতকাল সকাল নয়টার মধ্যে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে। সিতারা হালিমের মেয়ে রোববার রাত আটটার দিকে যখন মায়ের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলছিলেন, তখন কয়েকবার কলবেল বাজার শব্দ পান। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে, রাত আটটার পরে কোনো এক সময় খুনি ঘরের কলবেল বাজালে সিতারা হালিম দরজা খুলে দেন। এরপর খুনি তাঁকে হত্যা করে স্বর্ণের গয়না ও টাকা লুট করে পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে যায়। খুনি সিতারা হালিমের পরিচিত এবং ওই বাড়িতে তার আসা–যাওয়া ছিল। ঘটনাস্থলে স্যালাইনের চিকন পাইপ পাওয়া গেছে। সিতারা হালিমের গলায় আঘাতের চিহ্ন থাকায় মনে করা হচ্ছে, স্যালাইনের পাইপ দিয়ে তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।

পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আ জ ম মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘ওই বাড়িতে যাওয়া–আসা করা কয়েক ব্যক্তি এবং রংমিস্ত্রি আবদুল কুদ্দুসকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আশা করছি, দ্রুত এ হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন করে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা যাবে।’

সিতারা হালিম পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ প্রয়াত আবদুল হালিম হাওলাদারের স্ত্রী। তাঁর ছেলে আমীর খসরু ভয়েস অব আমেরিকার বাংলাদেশের সাবেক সংবাদদাতা।

গতকাল রাত নয়টায় পিরোজপুর বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠের কেন্দ্রীয় ঈদগাহে সিতারা হালিমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পৌর কবরস্থানে স্বামী আবদুল হালিম হাওলাদারের কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।

এদিকে আজ সকালে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে সিতারা হালিমের বাসায় যান।