কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ

পরনের গেঞ্জিই চিনিয়ে দিল রানা মিয়ার মরদেহ

বছর দুয়েক আগে ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেন রানা মিয়া
ছবি: সংগৃহীত

আজ রোববার দুপুর ১২টা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এদিক-ওদিক ঘুরছিলেন খোকন চাকমা। খুঁজছিলেন তাঁর ভাই নিপন চাকমাকে। নিপন সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার। গতকাল শনিবার রাতে সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এরই মধ্যে আজ বেলা একটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে অ্যাম্বুলেন্সে করে একটি মরদেহ আসে। দেখার পর খোকন বলেন, সেটি তাঁর ভাই নিপনের। তবে ভিন্ন কথা নিপনের সহকর্মীদের। তাঁরা বলেন, এটি অন্য কারও, নিপনের নয়। কারণ, নিপনের পায়ে ভিন্ন জুতা ছিল। মুখ ও শরীরের অবয়বেও মিল নেই।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুনঃ

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে হতাহতদের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা ডিপোর মালিকপক্ষের

সীতাকুণ্ডের ঘটনায় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আছে কি না, দেখার দাবি হারুনের

ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার রাতেই প্রাণ গেল আলাউদ্দিনের

ডিপোর রাসায়নিক সাগরে যাওয়া ঠেকাতে বাঁধ

সীতাকুণ্ডে আগুনের ঘটনায় পৃথক ৪ তদন্ত কমিটি

এ নিয়ে দুই পক্ষই পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চট্টগ্রাম জেলার পরিদর্শক মো. মনির হোসেনের দ্বারস্থ হয়। তিনি দুই পক্ষকে নিয়ে লাশটি দেখতে যান। তাঁদের সঙ্গে যান আগুন লাগার ঘটনায় নিখোঁজ স্বজনকে খুঁজতে থাকা মো. রাসেল শেখ নামের এক ব্যক্তি।

প্রথমে লাশের অবয়ব ও সঙ্গে থাকা নানা জিনিসপত্র দেখে পরিবারের সদস্যরা শনাক্ত করছেন। এভাবে না হলে আঙুলের ছাপ নেওয়া হচ্ছে। তাতেও শনাক্ত করা না গেলে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।

চট্টগ্রাম মেডিকেলে গিয়ে দেখা যায়, লাশের পরনে ছিল একটি গেঞ্জি। তাতে লেখা ছিল ‘কোকাদি ক্লাব’। এটি মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার একটি সংগঠন। গেঞ্জি দেখে রাসেল নিশ্চিত হন, লাশটি নিপনের নয়, ফায়ার সার্ভিসের আরেক কর্মী রানা মিয়ার। রানা কাজ করতেন কুমিরা ফায়ার স্টেশনে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশঘরের সামনে থেকে রাসেল শেখ প্রথম আলোকে বলেন, রানা মিয়ার বয়স ২৪ বছর, অবিবাহিত। সম্পর্কে তাঁর শ্যালক। রানার বাবার নাম মো. পান্নু মিয়া। মায়ের নাম রেনু বেগম।

রাসেল আরও বলেন, বছর দুয়েক আগে রানা ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেন। এটিই ছিল তাঁর প্রথম চাকরি। তাঁরা দুই ভাই, এক বোন। চাকরি পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত ছিলেন রানা। মন দিয়ে কাজও করছিলেন। কিন্তু একটা দুর্ঘটনা সব শেষ করে দিল। এমন মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়।

লাশ দেখার পর খোকন বলেন, সেটি তাঁর ভাই নিপনের। তবে ভিন্ন কথা নিপনের সহকর্মীদের। তাঁরা বলেন, এটি অন্য কারও, নিপনের নয়। কারণ, নিপনের পায়ে ভিন্ন জুতা ছিল। মুখ ও শরীরের অবয়বেও মিল নেই।

এদিকে পিবিআইয়ের পরিদর্শক মনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, লাশটি রানা মিয়ার, তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ছাড়া তাঁরা আজ বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত মোট ১৭ জনের লাশ শনাক্ত করতে পেরেছেন।

লাশ শনাক্তের কয়েকটি পদ্ধতি নিয়েও কথা বলেন মনির হোসেন। তিনি বলেন, প্রথমে লাশের অবয়ব ও সঙ্গে থাকা নানা জিনিসপত্র দেখে পরিবারের সদস্যরা শনাক্ত করছেন। এভাবে না হলে আঙুলের ছাপ নেওয়া হচ্ছে। তাতেও শনাক্ত করা না গেলে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৯ জনের লাশ আনা হয়েছে। বিকেল পাঁচটার দিকে হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। অন্তত ২০০ জন আহত হয়েছেন।

হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান রফিক উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর এই বিভাগে ২৬টি শয্যা রয়েছে। তাঁরা ৪৫ জনকে চিকিৎসা দিতে সক্ষম। কিন্তু গতকাল ৫৭ জন ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের শরীর ৩ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত পুড়ে গেছে। কারও চোখে, কারও পায়ে, কারও হাতে আঘাত রয়েছে। এ ছাড়া শরীরের নানা অংশও পুড়েছে।