পদ্মা সেতুর নাওডোবা প্লাজার সামনে মোটরসাইকেলের জট

জাজিরা প্রান্তের টোলপ্লাজার সামনে কয়েক হাজার মোটরসাইকেলের জট তৈরি হয়। রোববার বিকেলে
 ছবি: প্রথম আলো

শরীয়তপুরের জাজিরার বিকেনগরের হাওলাদারকান্দি গ্রামের বৃদ্ধ কিতাবদি হাওলাদারকে পদ্মা সেতু দেখাতে নিয়ে এসেছেন তাঁর ছেলে সিরাজুল ইসলাম। একই মোটরসাইকেলে ছেলে আবু সাঈদ ও জুনায়েদকে বসিয়ে জাজিরা প্রান্ত থেকে সেতু দিয়ে মাওয়া প্রান্তে আসেন তিনি।

তাঁর মতো অনেকেই মোটরসাইকেলে পদ্মা সেতু দেখতে এসেছেন। এতে সেতুর জাজিরা প্রান্তে নাওডোবা টোলপ্লাজার সামনে মোটরসাইকেলের তীব্র জট দেখা দেয়।

আজ রোববার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক ত্যাগের বিনিময়ে পদ্মা সেতু পেয়েছি। বাবা বয়স্ক মানুষ, কখন কী হয়? তাই বাবা ও দুই ছেলেকে নিয়ে সেতুতে ঘুরতে এসেছি। তিন প্রজন্ম একসঙ্গে স্বপ্নের সেতুতে এসেছি, এটা আমাদের জীবনের অনেক বড় প্রাপ্তি।’

বৃদ্ধ কিতাবদি হাওলাদার বলেন, ‘বাড়িতে শুয়ে-বসে পদ্মা সেতুর কথা শুনেছি। ছেলে আমাকে সেতু দেখাতে নিয়ে আসবে তা ভাবতে পারিনি। পদ্মা নদীর সঙ্গে শত বছরের স্মৃতি আমার। কখনো সুখের কখনো দুঃখের। জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে সেই নদীর ওপর সেতু দেখব, তা স্বপ্নেও ভাবিনি।’

রোববার সকালে যখন পদ্মা সেতুর দুই প্রান্ত থেকে যানবাহন ছেড়ে দেওয়া হয়, তখন টোল দিয়ে হুড়োহুড়ি করে সেতুতে উঠে পড়েন মোটরসাইকেল আরোহীরা। সারা দিনই মোটরসাইকেলে সেতু পার হয়েছেন তাঁরা। বিকেল চারটার পর থেকে জাজিরা প্রান্তের নাওডোবা টোলপ্লাজার সামনে কয়েক হাজার মোটরসাইকেল দেখা যায়। মোটরসাইকেল আরোহীরা টোলপ্লাজার ছয়টি বুথের সামনে ঢুকে পড়েন। এতে অন্যান্য যানবাহন সেতুতে উঠতে সমস্যা হয়। বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত পাঁচটি বুথ দিয়ে মোটরসাইকেল ও একটি বুথ দিয়ে অন্যান্য যানবাহন সেতুতে ওঠে। এতে টোলপ্লাজার সামনে থেকে সংযোগ সড়কে অন্তত দুই কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়।

একই মোটরসাইকেলে বৃদ্ধ বাবা ও দুই ছেলেকে নিয়ে পদ্মা সেতু দেখতে এসেছেন সিরাজুল ইসলাম। রোববার বিকেলে জাজিরা প্রান্তে নাওডোবা টোলপ্লাজার সামনে

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রোববার সকাল ছয়টা থেকে যানবাহন চলাচল শুরু করা হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। সংখ্যার দিক থেকে আজ মোটরসাইকেলে পারাপারের সংখ্যা ছিল বেশি। তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করতে টোলসংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত ব্যক্তিদের বেগ পেতে হচ্ছে। প্রথম দিন হওয়ায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। খুব শিগগিরই সবকিছু শৃঙ্খলার মধ্যে চলে আসবে।

পদ্মা সেতুতে ঘুরতে আসা বেশির ভাগ মানুষই মোটরসাইকেল আরোহী। তাঁরা জাজিরা প্রান্ত থেকে মাওয়া প্রান্তে গিয়ে আবার জাজিরা প্রান্তে ফিরে আসেন। যাওয়া–আসার সময় তাঁরা সেতুতে নেমে সময় কাটিয়েছেন, হেঁটেছেন। অনেকে হেলমেট না পরে একই মোটরসাইকেলে তিন-চারজন উঠে সেতু পার হয়েছেন। সেতুতে মোটরসাইকেল থামানো বন্ধ করতে ও মানুষের হাঁটাহাঁটি বন্ধ করতে বিকেলে টহল দিয়েছেন শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার এস এম আশ্রাফুজ্জামান ও জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান।

বেলা দুইটা পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে ১৫ হাজার ২০০ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন পার হয়েছে। এসব যানবাহন থেকে ৮২ লাখ ১৯ হাজার ৫০ টাকা টোল আদায় করা হয়েছে।
কামরুল হাসান, ইউএনও, জাজিরা

আশ্রাফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষের আবেগ ও ভালোবাসার স্থাপনা পদ্মা সেতু। তাই আবেগের কারণে প্রথম দিনই মানুষ সেতুতে ভিড় করছেন। মানুষের সহজ বাহন মোটরসাইকেল নিয়ে সেতুতে উঠছেন অনেকে। আমরা চেষ্টা করছি, সবকিছু নিয়ন্ত্রণে নিতে।’

ইউএনও কামরুল হাসান বলেন, আইন অমান্য করায় কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়েছে। রোববার সকাল ছয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে ১৫ হাজার ২০০ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন পার হয়েছে। এসব যানবাহন থেকে ৮২ লাখ ১৯ হাজার ৫০ টাকা টোল আদায় করা হয়েছে।