পদ্মা সেতুতে তৃতীয় দিনে যান চলাচল স্বাভাবিক, ভোগান্তিতে মোটরসাইকেল আরোহীরা

মোটরসাইকেলে করে পদ্মা সেতু পার হতে আসা ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দিচ্ছেন সেতুর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা। আজ মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে সেতুর মাওয়া প্রান্তে
ছবি: প্রথম আলো

জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার তৃতীয় দিনে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে মাওয়া টোল প্লাজায় আসামাত্র টোল পরিশোধ করে যানবাহন নিয়ে সেতু দিয়ে পদ্মা নদী পাড়ি দিচ্ছেন লোকজন। তবে সেতুতে মোটরসাইকেল পারাপার নিষিদ্ধ থাকায় এবং ফেরি না চলায় বিপাকে পড়েছেন মোটরসাইকেল আরোহীরা।

আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মাওয়া টোল প্লাজা এলাকায় দেখা যায়, বাস, প্রাইভেট কার, ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন টোল প্লাজার সামনে আসছে। কোনো রকম অপেক্ষা ছাড়া এসব যানবাহন টোল পরিশোধ করে সেতুতে উঠে জাজিরার উদ্দেশে রওনা করছে। ভোগান্তি ছাড়াই সেতুতে উঠতে পারায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী ও চালকেরা।

খুলনার বটিয়াঘাটা এলাকার ব্যক্তিগত গাড়ির যাত্রী সাকিব আহমেদ বলেন, ‘আগে ফেরিঘাটে গেলে ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। এখন অল্প সময়ের মধ্যে টোল পরিশোধ করেছি। কয়েক মিনিটের মধ্যে পদ্মা পাড়ি দিয়ে ওই পারে চলে যাব।’

ট্রাকচালক আবদুল জব্বার বলেন, গত বছর এ সময় ঘাটে এসে পদ্মা পারি দিতে এক সপ্তাহ পর্যন্ত ঘাটে বসে থাকতে হয়েছে। তারপর ফেরিতে ওঠার সুযোগ পান। এখন তো অল্প কিছু সময়ের মধ্যে পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে পারছেন। ঢাকা থেকে একটি ট্রিপ নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের যেকোনো জেলায় গেলে এক দিনের মধ্যেই সে টিপ খালাস করে আবার ঢাকায় ফিরতে পারছেন।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন আজ মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকে খুব স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করছে। সেতুর মাওয়া প্রান্তে কোনো চাপ নেই। মোটরসাইকেল পারাপার বন্ধ রয়েছে। সেতুতে না নামা, ছবি তোলা—এসব বিষয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পাশাপাশি সেতু কর্তৃপক্ষের টহল দল সেতুতে টহল দিচ্ছে। গত দুদিনে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে সাড়ে ১৫ হাজার যানবাহন থেকে প্রায় ২ কোটি ৫ হাজার ৩০০ টাকা টোল আদায় করা হয়েছে।

এদিকে গত রোববার রাতে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার পর গত সোমবার সকাল থেকে সেতুর ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে ফেরি চলাচলও। সবশেষ গতকাল সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে ১১৯টা মোটরসাইকেল নিয়ে ফেরি কুঞ্জলতা শিমুলিয়া ঘাট থেকে শরীয়তপুরের মাঝিকান্দি ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এর পর থেকে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনো ফেরি ছেড়ে যায়নি। সেতু ও ফেরিতে মোটরসাইকেল পার করতে না পারায় ভোগান্তিতে পড়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মোটরসাইকেল আরোহীরা।

টোল দিয়ে নির্বিঘ্নে পদ্মা সেতু পার হচ্ছে বিভিন্ন যানবাহন। আজ মঙ্গলবার সকালে মাওয়া প্রান্তে

মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে দুজন মোটরসাইকেল আরোহী মাওয়া টোল প্লাজার সামনে আসেন। এ সময় সেতু নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা মোটরসাইকেল আরোহীদের টোল প্লাজা থেকে ফিরিয়ে দেন। তাঁদের একজন মো. মশিউর রহমান। তিনি মিরপুরে চাকরি করেন। তাঁর বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়ায়। মশিউর বলেন, সেতুতে মোটরসাইকেল পারাপার বন্ধ বিষয়টি জানা ছিল না। এ জন্য তিনি সেতু এলাকায় আসেন। সেতু থেকে তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি শিমুলিয়া ফেরিঘাটে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন, ফেরি চলছে না। কিছু সময় অপেক্ষা করে আবারও টোল প্লাজার সামনে এসেছেন।

মশিউর আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, ‘মোটরসাইকেল নিয়ে সেতুতে উঠতে পারছি না। এখন পিকআপ ভ্যানে করে কোনোভাবে মোটরসাইকেলটি সেতু পার হওয়া যায় কি না চেষ্টা করব।’

এস এম রিয়াদ হোসেন নামের আরেক মোটরসাইকেল আরোহী বলেন, তিনি রাজধানীর বনশ্রীতে থাকেন। যাবেন মাদারীপুরের পুরান বাজার এলাকায়। তাঁর ভাষ্য, সব সময় ফেরিতে যেতেন। এখন ফেরি বন্ধ। সেতুতে উঠবেন, সেখানেও নিষেধাজ্ঞা। কী করবেন, বুঝতে পারছেন না।

বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ফয়সাল আহমেদ মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ঘাটে ছয়টি ফেরি রয়েছে। এর মধ্য চারটি সচল। পদ্মা নদীতে এখন প্রচণ্ড স্রোত। ফেরি চালালে ডুবোচরে আটকে যাচ্ছে। সকাল থেকে ১৫-২০টি মোটরসাইকেল ঘাটে এসে ঘুরে চলে গেছে। যদি ঘাটে একটি ফেরি পূর্ণ করার মতো মোটরসাইকেল আসে, তাহলে ফেরি এ ঘাট থেকে ছাড়া হবে।