পদ্মা-মেঘনা থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি ভাঙনের শিকার ইউনিয়নবাসীর

চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনায় বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন। গতকাল দুপুরে সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ভাঙনের শিকার চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরা‌জেশ্বর ইউনিয়ন বাসিন্দারা। আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ওই এলাকার কয়েক শ মানুষ এ মানববন্ধনে অংশ নেন।

এতে অংশ নেওয়া কয়েকজন নারী বলেন, ‘বারবার নদীভাঙনের কারণে আমরা দিশাহারা অবস্থায় আছি। এখন আমাদের কোনো ভিটেমাটি নেই। এর মূল কারণ নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। ১০ বছর ধরে রাজরা‌জেশ্বর ইউনিয়নের দুই পাশে পদ্মা ও মেঘনায় ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। তখন থেকে ভাঙনের তীব্রতা বাড়তে থাকে। এ বালু তোলা বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই। তা না হলে একসময় এই ইউনিয়নের অস্তিত্বই থাকবে না।’

১০ থে‌কে ১২ বার নদীর ভাঙনে ক্ষ‌তিগ্রস্ত হয়েছেন ওই ইউনিয়নের আবুল হাশেম। তিনি বলেন, ‘নদী এখন বেশি ভাঙছে। এর মূল কারণ নদী থেকে প্রতিদিন অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। আমি সরকা‌রের কাছে অনু‌রোধ কর‌ছি, আমাদের বাঁচান, রাজরা‌জেশ্বর ইউনিয়ন‌কে বাঁচান।’

ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইউনুস পাটওয়ারীর বাবা-দাদার কবরও নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন শত শত ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। অবিলম্বে এটা বন্ধ না করলে আমাদের মাথা গোঁজার যাওয়ার জায়গা থাকবে না।’

ইউনুস পাটওয়ারী বলেন, ভাঙনের শিকার অনেকেই পাশের জেলা শরীয়তপুরের তারাবু‌নিয়ায় গিয়ে বা‌ড়িঘর করেছে। বর্তমানে ইউনিয়নের ২৩ হাজার মানুষ ভাঙন–আতঙ্কে রয়েছে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা ও ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে রাজরা‌জেশ্বর ইউনিয়নের ৮টি ওয়ার্ড নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ঘরহারা হয়েছে পাঁচ শতাধিক পরিবার। এ ছাড়া একটি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, একটি হাইস্কুল, একটি মাদ্রাসাসহ বাজার বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন এলাকার পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও স্থানান্তর করা হচ্ছে।

ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হযরত আলী ব্যাপারী বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের সামনে একটি মানববন্ধন হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু কারা করেছে, তা জানি না।’

ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ইউনিয়নটি কয়েক বছর ধরে পদ্মা-মেঘনা গিলে খাচ্ছে। এর প্রধান কারণ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। বিষয়টি বহুবার স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কিন্তু অপরিকল্পিত বালু তোলা বন্ধ হয়নি।