মৎস্য বিভাগ ও পুলিশ অভিযান চালায়। তবে কিছু সময় বিরতি দিয়ে নদীতে নেমে পড়েন জেলেরা।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মা নদীতে অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না। অবৈধভাবে মাছ শিকার বন্ধে মাঝেমধ্যে মৎস্য বিভাগ ও পুলিশ অভিযান চালায়। তবে কিছু সময় বিরতি দিয়ে পুনরায় একইভাবে নদীতে নেমে পড়েন জেলেরা।
গোয়ালন্দের চার ইউনিয়ন দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম, উজানচর ও ছোটভাকলা ইউনিয়নের পাশ দিয়ে পদ্মা নদী বয়ে গেছে। নদীতীরের অধিকাংশ পরিবারের প্রধান পেশা মাছ শিকার। প্রধানত কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে, যা বিক্রি ও ব্যবহার দুটোই নিষিদ্ধ। কারেন্ট জাল ব্যবহার করায় জাটকা ধরা পড়ছে। অনেকে কারেন্ট জালের সঙ্গে মশারি জাল (ঘন ও ছোট ছিদ্র) ব্যবহার করেন। এতে ডিমওয়ালা মাছ ধরা পড়ছে, যাতে দেশি প্রজাতির মাছের বংশবিস্তার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে তাঁরা কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরেন। এ ছাড়া এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে জেলেদের হাতে কারেন্ট বা মশারি জাল তুলে দিচ্ছেন।
গত রোববার দেবগ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার শেখ ও তাঁর ছেলে কারেন্ট জাল নিয়ে মাছ শিকারে বের হন। আনোয়ার শেখ বলেন, নিজের কিছু জমি ছিল। তা–ও কয়েক বছর আগে নদীতে ভেঙে গেছে। এখন নদীর পাড় থেকে অনেকটা দূরে অন্যের জমি বার্ষিক ইজারা নিয়ে বাস করছেন। মাঝেমধ্যে দিনমজুরের কাজ করেন। সময়–সুযোগ পেলে ছেলেদের নিয়ে মাছ ধরতে নামেন। নিজের টাকা না থাকায় আরেকজনের থেকে কিছু টাকা ধার করে জাল কিনেছেন। সরকার থেকে কোনো চাল পাননি।
দেবগ্রামের কাওয়ালজানি গ্রামের বাবর আলী বলেন, ৬০ হাজার টাকা দিয়ে কারেন্ট জাল কিনেছেন। এর মধ্যে ৫০ হাজার টাকা ধার করেছেন। মাসে ১০ শতাংশ হারে সুদ দিতে হয়। জালে ছোট-বড় সব ধরনের ইলিশ ও ছোট সব মাছ ধরা পড়ে। মাঝেমধ্যে খাবারের মাছ দিতে হয়। সব মিলে ভালো নেই। কিন্তু অন্য কাজ তো জানা নেই। তাই কষ্ট করে হলেও এই পেশায় আছেন তিনি।
দৌলতদিয়া ইউনিয়নের হাতেম মণ্ডলের পাড়ার মিল্লাত কাজীর বসতঘর ও ফসলি জমি কয়েক বছর আগে নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে। এখন অন্যের জমিতে থাকেন। ছোটবেলা থেকে মাছ ধরার অভ্যাস। এখন মাছ ধরাই তাঁর প্রধান পেশা।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রেজাউল শরীফ বলেন, কারেন্ট জাল ব্যবহার সম্পূর্ণ অবৈধ। কিছু অসাধু ব্যক্তি জেলেদের কাছে টাকা লগ্নি খাটান। অনেকটা বাধ্য হয়ে জেলেরা কারেন্ট, মশারি জাল কিনে মাছ শিকার করেন। মশারি জালে দেশি প্রজাতির ছোট মাছ ও ডিম আটকা পড়ে। এতে বংশবিস্তার চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অভিযান চালালেও সুযোগ পেলেই জেলেরা নদীতে নেমে পড়েন। তবে পুনর্বাসনের জন্য মাঝেমধ্যে সরকারি সহযোগিতা করা হচ্ছে।