মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় বাংলাবাজার ফেরিঘাটের বালুবাহী বাল্কহেডের সঙ্গে স্পিডবোটের সংঘর্ষে নিহত ২৬ জনের পরিচয় মিলেছে। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় নিহত সবার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের কাজ শেষ করে পুলিশ।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দুপুর থেকে নিহত সবার পরিচয় শনাক্তের কাজ শুরু করি। পরে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর শুরু করি। সন্ধ্যার আগেই আমরা সব কটি লাশের পরিচয় নিশ্চিত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা স্পিডবোটের চালককে পুলিশের হেফাজতে চিকিৎসা দিচ্ছি। এ ছাড়া বোটটির মালিক মাওলা এলাকার চান্দু মিয়াকেও গ্রেপ্তার করা হবে।’
দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা হলেন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার মৌলতীকান্দি এলাকার আজিত মোল্লার ছেলে আলম মোল্লা (৩৮), একই উপজেলার গুয়াতলা এলাকার আদম আলী মোল্লার ছেলে শাহাদাত হোসেন (৪২), রাজৈর শঙ্কারদি এলাকার তারা মিয়া মীরের ছেলে তাহের মীর (৩০), সদর উপজেলার শ্রীনদী এলাকার আবদুল মান্নান মোল্লার ছেলে আবদুল আহাদ (৩০), খুলনার তেরখাদা উপজেলার পারুফল এলাকার মৃত আলম মিয়ার ছেলে মনির মিয়া (৩৮), মনির মিয়ার স্ত্রী হীনা বেগম (৩৬), তাঁদের মেয়ে রুমি আক্তার (৩) ও সুমি আক্তার (৫), ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার মাইগ্রো এলাকার মৃত পান্নু সরদারের ছেলে আরজু সরদার (৪০) এবং আরজুর দেড় বছর বয়সী ছেলে ইয়ামিন, বরিশালের বন্দর থানার তেদুরিয়া এলাকার মো. আলী আহমেদের ছেলে আনোয়ার চৌকিদার (৫০), বানারীপাড়া উপজেলার হাশেম ব্যাপারীর ছেলে আলাউদ্দিন ব্যাপারী (৪৫), চাঁদপুরের মতলব উত্তর থানার মোহনপুর এলাকার মৃত আলী হোসেন ব্যাপারীর ছেলে মো. দেলোয়ার হোসেন (৪৫), নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার রাজাপুর এলাকার হাফিজুর রহমানের ছেলে জোবায়ের মোল্লা (৩০), কুমিল্লার তিতাস উপজেলার ইউসুফপুর এলাকার মৃত আবদুল মান্নানের ছেলে জিয়াউর রহমান (৩৮), দাউদকান্দি উপজেলার মাইখারকান্দি এলাকার মৃত আবদুল হাশেমের ছেলে মো. কাওসার আহমেদ (৪০), একই এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে মো. রুহুল আমিন (৩৬), মুন্সিগঞ্জের সাতপাড় এলাকার চান মিয়া শেখের ছেলে সাগর শেখ (৪১), বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার আশা এলাকার রত্তু হোসেনের ছেলে সাইদুল হোসেন (২৭), একই উপজেলার পূর্বষট্টি এলাকার সাদেক ব্যাপারীর ছেলে রিয়াজ হোসেন (৩৩) ও সাইফুল ইসলাম (৩৫), একই উপজেলার মনির হোসেন (৩৫), ঢাকার পীরেরবাগ এলাকার নুরে আলমের ছেলে খোরশেদ আলম (৪৫), ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার রাজাবাড়িয়া এলাকার মৃত আবদুল কুদ্দুস শিকদারের ছেলে নাসিরউদ্দিন (৪৫), পিরোজপুর জেলার সদর উপজেলার চরখানা এলাকার মো. ওহিদুরের ছেলে বাপ্পী (২৮) এবং পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার পসারিয়াবুনিয়া এলাকার রঞ্জন অধিকারীর ছেলে জনি অধিকারী (২৬)।
ঘাট কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ সূত্র জানায়, সোমবার সকাল সাতটার দিকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে ৩২ জন যাত্রী নিয়ে স্পিডবোট মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজারের দিকে যাচ্ছিল। স্পিডবোটটি বাংলাবাজার ফেরিঘাটের কাছাকাছি এলে ঘাটের কাছে নোঙর করা বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডের পেছন দিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। মুহূর্তেই স্পিডবোটটি উল্টে বাল্কহেডের নিচে চলে যায়। খবর পেয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস ও নৌ–পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন। ঘটনাস্থল থেকে ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সাঁতরে তীরে উঠেছেন ছয়জন। তাঁদের উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে সেখানে এক নারীর মৃত্যু হয়।
এদিকে, ওই স্পিডবোটের চালককে আটক করেছে পুলিশ। তাঁকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
মামলার বিষয়ে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘চালককে গ্রেপ্তার করা ছাড়াও স্পিডবোট মালিকের নামেও মামলা হবে। এগুলো সবই নৌপুলিশ করবে। আমরা তাদের সহযোগিতা করব।’
এ ঘটনায় মাদারীপুর স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজাহারুল ইসলামকে প্রধান করে ছয় সদস্যদের তদন্ত কমিটি করেছেন জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে দাফন–কাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।