বাবা ফরাশ উদ্দিন কাজী ছিলেন বাঁশিওয়ালা। বাঁশের বাঁশিতে সুর তুলে মেলায়, গ্রামগঞ্জে বিক্রি করতেন। ছেলে আবদুল গফুর কাজী একসময় যাত্রাদলে অভিনয় করতেন। যাত্রা ছেড়ে ২০ বছর বয়সে বাবার সঙ্গে বাঁশি বিক্রির পেশা বেছে নেন।
গফুর কাজীর বয়স এখন প্রায় ৬০। প্রায় ৪০ বছর ধরে শহর, গ্রাম, রেলস্টেশন আর পথে পথে ঘুরে সুর তুলে বিক্রি করছেন বাঁশের বাঁশি। পথে পথে ঘোরা গফুরের বাড়ি নওগাঁর বদলগাছি থানার দাউদপুর গ্রামে।
গত শুক্রবার বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলায় বসে কথা হয় গফুরের সঙ্গে। কালীবাড়ি মন্দিরের মোড়ে বাঁশি বিক্রি করছিলেন গফুর। তিনি জানান, সারা বছর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বাঁশি বিক্রি করেন। বাড়িতে বাঁশ কেটে বাঁশি তৈরি করেন তাঁর স্ত্রী জমিলা বেগম। সেই বাঁশি সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। ট্রেনে করে ঘুরে বেড়ান উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা–উপজেলায়।
গফুরের দীর্ঘদিনের সঙ্গী বাঁশি। সুরও আয়ত্ত করেছেন কয়েক হাজার গানের। যেকোনো গান শুনে বাঁশিতে সুর তুলতে গফুরের দু-তিন মিনিট সময় লাগে। পল্লিগীতি, ভাওয়াইয়া, লালনগীতি, বিচ্ছেদ, পুরোনো বাংলা ও হিন্দি সিনেমার গানের সুরও তুলতে পারেন।
গফুর জানান, বাঁশিওয়ালা পেশায় জীবনের ৪০টা বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। তবে এখন বাঁশের বাঁশির কদর কমেছে। তিন ছেলে আছে তাঁর। বাবার হাত ধরে নিজে এ পেশায় এলেও সন্তানদের আসতে দেননি। তাঁরা পোশাক কারখানায় কাজ করেন।
গফুরের সবচেয়ে দুঃসময় গেছে করোনার বিধিনিষেধের সময়। বাঁশি ভালো বিক্রি হয় গ্রাম ও শহরের মেলায়। বিধিনিষেধের মধ্যে এসব বন্ধ ছিল। সবকিছু বন্ধ থাকায় টানা দেড় বছরের বেশি সময় বেচাবিক্রি হয়নি। করোনার আগে প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার টাকার বাঁশি বিক্রি হতো। এখন দিনে ৩০০ টাকাও আয় হয় না।
কত দিন আর পথে পথে ঘুরে এভাবে বাঁশি বাজাবেন? গফুর বলেন, ‘আত্মার সঙ্গে বাঁশির সুর মিশে আছে। আত্মা যেদিন থাকবে না, সেদিন সুরও থেমে যাবে।’