একজ জাগরণের সদস্যদের রোপণ করা কৃষ্ণচূড়াগাছগুলোতে ফুটে রয়েছে ফুল। লাল ফুলে গোটা এলাকা রঙিন হয়েছে। গতকাল রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাজার রেলওয়ে স্টেশন এলাকায়
একজ জাগরণের সদস্যদের রোপণ করা কৃষ্ণচূড়াগাছগুলোতে ফুটে রয়েছে ফুল। লাল ফুলে গোটা এলাকা রঙিন হয়েছে। গতকাল রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাজার রেলওয়ে স্টেশন এলাকায়

পথের ধারে সৌন্দর্য বিলাচ্ছে কৃষ্ণচূড়া

প্রায় এক যুগ আগে এক হাজারের বেশি কৃষ্ণচূড়াগাছের চারা রোপণ করেন কিছু শিক্ষিত ও সৌন্দর্যপ্রেমী যুবক।

প্রকৃতিতে এখন গ্রীষ্মকাল। এ ঋতুতে কখনো কালবৈশাখীর রুদ্র তাণ্ডব, কখনো রোদের খরতাপ খড়্গ হয়ে নামছে। তবে মন জুড়াতে এ সময় ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া। তপ্ত গ্রীষ্মে ডানা মেলা রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া পথের ধারে নীরবে সৌন্দর্য বিলাচ্ছে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ শহরে বেরোলেই ফুলভর্তি এ রকম কৃষ্ণচূড়াগাছের দেখা মিলছে। বিশেষ করে গোয়ালন্দ রেলস্টেশন এলাকায় রেললাইনের পাশ দিয়ে শতাধিক গাছে শোভা পাচ্ছে কৃষ্ণচূড়ার রঙিন ফুল। এর ফলে গোয়ালন্দ শহর এখন কৃষ্ণচূড়ার রঙে রঙিন এক শহর হয়ে উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় এক যুগ আগে গোয়ালন্দ-দৌলতদিয়া ঘাটগামী রেললাইন-রাস্তার দুই পাশসহ গোয়ালন্দ শহরের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বাজার এলাকায় এক হাজারের বেশি কৃষ্ণচূড়াগাছের চারা রোপণ করেন স্থানীয় কিছু শিক্ষিত ও সৌন্দর্যপ্রেমী যুবক। তাঁদের রয়েছে একটি সামাজিক সংগঠন, যার নাম ‘একজ জাগরণে’। আজ সেসব গাছ বড় হয়েছে। থোকা থোকা কৃষ্ণচূড়ার ফুল এলাকায় শোভা বাড়াচ্ছে।

সংগঠনটি সূত্রে জানা যায়, একজ জাগরণের সদস্যরা মূলত প্রাণ ও প্রকৃতি নিয়ে কাজ করেন। তাঁরা পাখি সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, তাঁদের রোপণ করা গাছে মাটির হাঁড়ি বেঁধে দেওয়া। সংগঠনের সদস্যদের মধ্য থেকে টাকা তুলে এসব কাজ করছেন তাঁরা। কয়েক বছর আগে একবার গাছগুলো কেটে ফেলার উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে। সে সময় একজ জাগরণের তরুণেরা রেললাইনে শুয়ে পড়ে গাছ কাটার প্রতিবাদ করেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন প্রকৃতিপ্রেমীরাও। খবর শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। সবার অনুরোধে রক্ষা পায় সারি সারি কৃষ্ণচূড়াগাছ।

সরেজমিনে গোয়ালন্দ রেলস্টেশন ও আশপাশের সড়কগুলোতে দেখা যায়, সড়কের পাশে একজ জাগরণের রোপণ করা কৃষ্ণচূড়াগাছগুলোতে প্রচুর ফুল ফুটেছে। কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুলের ভিড়ে গাছের সবুজ পাতারা যেন হারিয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন কৃষ্ণচূড়াগাছের নিচে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, বসে আড্ডা দিচ্ছেন। অনেককে পরিবার নিয়ে এসব এলাকায় ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। শিশু-কিশোরীরা গাছের নিচে পড়ে থাকা ফুলের পাপড়ি কুড়াচ্ছে।

শহরের বাসিন্দা উজানচর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বাবর আলী (৪৮) বলেন, ‘আগে যখন গাছগুলো ছিল না, তখন রাস্তা দিয়ে দিনের বেলায় প্রচণ্ড রোদে চলাচলে কষ্ট হতো। এই গাছগুলোর জন্য এখন আমাদের চলাচল অনেক আরামদায়ক হয়েছে। আমরা এখন গাছের নিচে বসতে পারি। গাছগুলো রোদে ছাতার মতো কাজ করে। তা ছাড়া বিকেলের দিকে এই গাছের নিচে বসে আড্ডা দিই। এ ছাড়া এলাকার অনেক হাট এই গাছের নিচেই বসে।’

একজ জাগরণের সদস্য শামীম আহমেদ বলেন, ‘গাছগুলো যখন আমরা রেললাইনের পাশ দিয়ে রোপণ করি, তখন অনেকেই আমাদের উন্মাদ, পাগলসহ আরও অনেক কিছু বলেছে। কিন্তু আমরা আমাদের কাজ করে গেছি। যখন গাছগুলো বড় হয়ে ফুল ফুটছে, তখন কত খুশি লাগে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তবে কষ্টও লাগে যখন দেখি, কিছু লোক ব্যানার-পোস্টার পেরেক ঠুকে গাছে ঝোলায়।’

একজ জাগরণের আহ্বায়ক সুজন সরওয়ার বলেন, এলাকার সৌন্দর্য ও পরিবেশের কথা বিবেচনা করে তাঁরা প্রতিবছর গাছ রোপণ করেন। কয়েক হাজার কৃষ্ণচূড়া ও হাজারখানেক তালগাছ বিভিন্ন স্থানে রোপণ করেছেন তাঁরা। গাছ ও ফুল শোভা বর্ধন করলেও এ সৌন্দর্যে ভাটা ফেলছে বিভিন্ন ব্যানার ও পোস্টার। তিনি বলেন, ‘আমাদের অসচেতনতার কারণে প্রাণ ও প্রকৃতির ক্ষতি হচ্ছে, যা আমাদের বোঝা উচিত।’