পরিবেশ আইন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে নির্মাণ করা হচ্ছে এসব স্থাপনা।
লোহার খুঁটির ওপর টিনের পাটাতন বসানো হয়েছে। তার ওপর স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে।
জোয়ারের পানির ঝাপ্টা থেকে স্থাপনাটি রক্ষায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে রাখা হয়েছে। জিও ব্যাগগুলো ভর্তি করা হয়েছে সৈকতেরই বালু দিয়ে।
২০১১ সালে হাইকোর্ট বিশেষ কমিটির মাধ্যমে সমুদ্রসৈকত এলাকার সীমানা নির্ধারণ করে দেন।
পর্যটনকেন্দ্র পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় সমুদ্রসৈকত অবৈধভাবে দখলে নিয়ে মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। আইন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে এক ব্যবসায়ী সৈকতের বালুচরে ওই স্থাপনা তুলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এভাবে সৈকতে স্থাপনা নির্মাণকে অবৈধ বলেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। বেলার বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন প্রথম আলোকে বলেন, বেড়িবাঁধের বাইরে যত জমি আছে এবং যে পর্যন্ত জোয়ারের পানি তীরভূমিতে উঠে আসে, সেই পর্যন্ত সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে। ওই জমি ব্যক্তিমালিকানার হলেও ইচ্ছামতো কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। বাংলাদেশ পানি আইনে বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট বেড়িবাঁধ থেকে সৈকতে নেমে পশ্চিম দিকে তাকালেই দেখা যায়, লোহার খুঁটির ওপর টিনের পাটাতন বসানো হয়েছে। তার ওপর স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। জোয়ারের পানির ঝাপ্টা থেকে স্থাপনাটি রক্ষায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে রাখা হয়েছে। জিও ব্যাগগুলো ভর্তি করা হয়েছে সৈকতেরই বালু দিয়ে। নির্মাণাধীন স্থাপনাটির পাশেই টিনের দুই তলা আরেকটি স্থাপনা রয়েছে। ওপরের তলায় আবাসিক হোটেলের মতো ব্যবহার করা হয়। নিচে শামুক–ঝিনুকের মার্কেট ও রেস্তোরাঁ। টিনের স্থাপনাটি ২০১২ সাল থেকে সৈকতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এটি উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না বলে জানা গেছে।
এর আগে এক রিট আবেদনের পরিপ্রক্ষিতে ২০১১ সালে হাইকোর্ট বিশেষ কমিটির মাধ্যমে সমুদ্রসৈকত এলাকার সীমানা নির্ধারণ, একই সঙ্গে সেখানে যেন নতুন করে দখল ও স্থাপনা নির্মাণ করা না হয়, সেই নির্দেশও দেন। এই নির্দেশনার পর পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সৈকতজুড়ে বেড়িবাঁধের বাইরে ২২৮টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয় এবং ৯০ শতাংশ স্থাপনাই ভেঙে দেওয়া হয়। বাকিগুলো মালিকপক্ষের মামলা জটিলতার কারণে ভাঙা সম্ভব হয়নি বলে উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, সাজেদুল ইসলাম নামের ঢাকার এক ব্যবসায়ী এই জমির মালিকানা দাবি করে সপ্তাহ তিনেক আগে মার্কেট নির্মাণকাজ শুরু করেন। এর আগেও এখানে দোকানপাট ছিল। কিন্তু পানির তোড়ে ভেঙে যাওয়ায় এবার লোহার খুঁটির ওপর স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে বলে মনে করেন স্থানীয় ব্যক্তিরা।
জানতে চাইলে সাজেদুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৬ সালে তিনি কুয়াকাটা এলাকার কে এম শাহজালাল নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে বায়না সূত্রে ওই জমি কিনেছেন। এখানে তাঁর মার্কেট ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সময় তা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন তিনি তাঁর জমিতেই লোহার কাঠামো দিয়ে মার্কেট নির্মাণ করছেন।
সাগরসৈকত কীভাবে কিনলেন জানতে চাইলে সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে বায়না সূত্রে মালিক হয়েছি। বায়নার পরও টাকা দেওয়া হয়েছে। এই জমি নিয়ে মামলাসহ নানা সমস্যা হবে, তা আগে বুঝিনি। আমি মো. শাহজালাল নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে এই জমি কিনেছি।’
এ ব্যাপারে মো. শাহজালালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনিসহ মোট ৯ জন মিলে ৭ একর ১৫ শতাংশ জমি স্থানীয় কয়েকজনের কাছ থেকে কিনেছিলেন। ওই জমি থেকে ৩৩ শতাংশ সাজেদুল ইসলাম নামের ঢাকার একজনের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। প্রশাসন থেকে তাঁদের উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলে ২০১১ সালে তাঁরা উচ্চ আদালতের আদেশ চ্যালেঞ্জ করেন এবং পটুয়াখালী জেলা জজ আদালতে মামলা করেন। ওই মামলায় তাঁদের স্থাপনা উচ্ছেদ না করার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। শাহজালালের দাবি, তাঁরা সরকারি জমি দখল করে স্থপনা করছেন না।
এদিকে মহিপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) আ. আজিজ জানান, সমুদ্রের বালুচরে লোহার খুঁটির ওপর মার্কেট নির্মাণ দেখে তিনি মৌখিকভাবে কাজ বন্ধ রাখতে বলেছেন এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এ জি এম সরফরাজ প্রথম আলোকে বলেন, সৈকতে সব ধরনের অবকাঠামো নির্মাণকাজ বন্ধ রেখে তাঁদের সপক্ষে জমির মালিকানার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে। কাগজপত্র পাওয়ার পরই এ ব্যাপারে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।