পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীর সঙ্গে দশম শ্রেণির ছেলের বিয়ে দিলেন শিক্ষিকা মা

বাল্যবিবাহ
প্রতীকী ছবি

দশম শ্রেণিপড়ুয়া ছেলের সঙ্গে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে দিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে।

গত শুক্রবার দুই পরিবারের সদস্যরা গোপনে বিয়ের আয়োজন সারলেও আজ সোমবার তা জানাজানি হয়। সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সরেজমিনে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। এ ঘটনায় বাল্যবিবাহের সঙ্গে জড়িত থাকায় ওই স্কুলশিক্ষিকাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

ওই শিক্ষিকার দাবি, তাঁর ছেলে সম্প্রতি পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এরপর বিয়ের দাবিতে সে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দেয়। এমনকি আত্মহত্যারও চেষ্টা চালায়। যে কারণে বাধ্য হয়ে তাদের বিয়ে দিয়েছেন।

প্রতিবেশীদের মাধ্যমে জানা গেছে, ওই স্কুলশিক্ষিকা নিজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে তাঁর দশম শ্রেণিপড়ুয়া ছেলের বউ করে আনবেন বলে কিছুদিন ধরে সহকর্মীদের জানিয়ে আসছিলেন। পরে গত শুক্রবার শিক্ষিকা নিজে উপস্থিত থেকে ছেলের সঙ্গে ও ওই মেয়ের বিয়ে দেন। আজ বিষয়টি জানাজানি হলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম ভুইয়া অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম কুমার কুণ্ডুকে চিঠি দেন। এরপর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ঘটনা তদন্তে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুমা আক্তারকে সরেজমিনে পাঠান। সরেজমিন তদন্তে অভিযুক্ত শিক্ষিকা তাঁর কাছে ঘটনা স্বীকার করেন এবং লিখিত বক্তব্য দেন।

লিখিত বক্তব্যে ওই স্কুলশিক্ষিকা বলেন, ‘আমার ছেলে দশম শ্রেণির ছাত্র। সে আমারই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। একপর্যায়ে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে এবং আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। মেয়েটির মা তিন সন্তান রেখে অন্যত্র চলে গেছেন এবং বাবা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। আমি মেয়েটির অসহায়ত্বের কথা চিন্তা করে এ অন্যায় কাজটি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি। কাজটি আইনগত দিক থেকে অবশ্যই অন্যায় হয়েছে। এ জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী। মেয়েটির পড়াশোনার দায়িত্ব আমি চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব।’

ইউএনও শামীম ভুইয়া বলেন, ‘বাল্যবিবাহের ঘটনাটি জানার পর অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। এ ছাড়া মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’

ইউএনও আরও বলেন, এ ঘটনায় কাজিকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ডেকে আনা হয়েছিল। বাল্যবিবাহ পড়ানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি। কাজির বিষয়েও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে কথা হয় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম কুমার কুণ্ডুর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। অভিযুক্ত শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশের জবাব পাওয়ার পর প্রশাসনিক ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।