পঞ্চগড় জেলা কারাগারের এক বন্দী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ ঘটনায় কারাগারের একটি ওয়ার্ড লকডাউন করে দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে এ ঘটনায় ৪ জন কারারক্ষী, জেলা পুলিশের ২ জন সদস্য, পঞ্চগড় সদর হাসপাতালের ১ জন নার্স, ১ জন ওয়ার্ডবয়সহ ১০ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আজ বৃহস্পতিবার পরীক্ষার জন্য কারাগারের ৫৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন মো. ফজলুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পঞ্চগড় জেলা কারাগার সূত্রে জানা যায়, ওই বন্দী অ্যাজমা রোগে ভুগছিলেন। ১ মে রাতে তাঁর অ্যাজমার সমস্যা বেড়ে গেলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরে রাতেই তাঁকে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে একটি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে পুলিশি পাহারায় তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ভর্তির পরও শ্বাসকষ্ট থাকায় ৩ মে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের পরীক্ষার জন্য তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে রংপুর মেডিকেল কলেজের ল্যাবে পাঠান চিকিৎসকেরা। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই বন্দীর নমুনা পরীক্ষার ফল করোনা পজিটিভ আসে।
এ বিষয়ে পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন মো. ফজলুর রহমান বলেন, পঞ্চগড় কারাগারের ওই বন্দী যে ওয়ার্ডে থাকতেন, সেই ওয়ার্ড লকডাউন করার পর ওই ওয়ার্ডে থাকা ৫২ জন বন্দীসহ ৫৫ জনের নমুনা বৃহস্পতিবার সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া ওই বন্দীর সংস্পর্শে আসায় কোয়ারেন্টিনে থাকা কারারক্ষী, পুলিশ সদস্যসহ অন্যদেরও পর্যায়ক্রমে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হবে।
পঞ্চগড় জেলা কারাগারের জেলার শফিকুল আলম বলেন, ‘ওই বন্দী গত ৩ মার্চ ঠাকুরগাঁও জেলা কারাগার থেকে পঞ্চগড় কারাগারে আসেন। এর মধ্যে একবার তিনি আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন। আগে থেকেই তাঁর অ্যাজমার সমস্যা ছিল। ১ মে তাঁকে হাসপাতালে পাঠানোর পর আমরা বন্দীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষায় বিশেষ সতর্কতা গ্রহণ করি। মঙ্গলবার রাতে ওই বন্দীর শরীরে করোনা শনাক্ত হওয়ার খবর পেয়ে তিনি যে ওয়ার্ডে ছিলেন, সেটি লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। ওই ওয়ার্ডে থাকা ৫২ জন বন্দীর বিশেষ নজরদারিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ওই বন্দীকে হাসপাতাল নেওয়া থেকে শুরু করে তাঁর সংস্পর্শে আসা চারজন কারারক্ষীকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। বর্তমানে পঞ্চগড় জেলা কারাগারে ২২৯ জন বন্দী রয়েছেন।’
পঞ্চগড় সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. সিরাজউদ্দৌলা বলেন, ১ মে রাতে ওই বন্দীকে মূলত অ্যাজমা রোগী হিসেবেই হাসপাতালে আনা হয়েছিল। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ও নার্সরা তাঁকে পিপিই পরেই চিকিৎসা দিয়েছিলেন। পরে তিনি কিছুক্ষণ মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীনও ছিলেন। তবে ওই রাতে মেডিসিন ওয়ার্ডটি প্রায় ফাঁকা ছিল। রংপুর মেডিকেলে পাঠানোর পর তাঁর করোনা পজিটিভ জানতে পেরে জরুরি বিভাগ ও মেডিসিন ওয়ার্ডটি জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া মেডিসিন ওয়ার্ডে কর্তব্যরত একজন নার্স ও একজন ওয়ার্ডবয়কে হোম কোয়ারেন্টিনের রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের চালকসহ অন্য একজনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। ওই বন্দীকে কারাগার থেকে হাসপাতালে আনা এবং চিকিৎসাব্যবস্থায় সংস্পর্শে আসা প্রত্যেকের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হবে।
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, ‘১ মে রাতে একজন বন্দীকে রংপুর মেডিকেলে পাঠানো হবে বলে আমাদের জানানো হয়। পরে আমরা দুজন পুলিশ সদস্যকে সঙ্গে দিই। তাঁরা পিপিই পরে রোগীর সঙ্গে গেলেও ওই রোগী করোনা পজিটিভ হওয়ায় তাঁদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।’