পঞ্চগড় জেলা কারাগারের এক বন্দী এবং দেবীগঞ্জ উপজেলার ঢাকাফেরত এক ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় ১৩ জন করোনায় আক্রান্ত হলেন। গতকাল রোববার রাতে পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন মো. ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চগড় কারাগারে করোনা শনাক্ত হওয়া ওই বন্দীকে পৃথক কক্ষে রাখা হয়েছে। তবে তাঁর শরীরে করোনার উপসর্গ নেই এবং তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। এর আগে ৫ মে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পঞ্চগড় জেলা কারাগারের ৫০ বছর বয়সী এক কারাবন্দীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এ ঘটনায় ওই কারাগার থেকে ৫৫ জন বন্দীর নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য রংপুর মেডিকেলের ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল। তাঁর বয়স ২৫ বছর।
অন্যদিকে দেবীগঞ্জ উপজেলার পামুলী ইউনিয়নের একটি গ্রামে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর ঢাকাফেরত ওই ব্যক্তিকে দেবীগঞ্জ উপজেলা শহরে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রেখে তাঁর শ্বশুরবাড়ি লকডাউন করেছে উপজেলা প্রশাসন। ওই ব্যক্তি সম্প্রতি লকডাউন হওয়া ঢাকার ইসকন মন্দিরে গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ৬ মে তিনি দেবীগঞ্জ উপজেলার পামুলী ইউনিয়নের একটি গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে পালিয়ে আসেন এবং সেখানে হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। তাঁর বয়স ৩৫ বছর।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা কারাগার সূত্রে জানা যায়, ১ মে রাতে পঞ্চগড় জেলা কারাগারে ৫০ বছর বয়সী এক বন্দীর পুরোনো অ্যাজমার সমস্যা বেড়ে গেলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরে রাতেই তাঁকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাত সাড়ে তিনটার দিকে একটি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সযোগে পুলিশি পাহারায় তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রংপুর কারাগারে যাওয়ার পরেও শ্বাসকষ্ট থাকায় গত ৩ মে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়। পরে ৫ মে সন্ধ্যায় ওই বন্দীর নমুনা পরীক্ষার ফলে করোনা পজিটিভ আসে। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই ওই বন্দী পঞ্চগড় জেলা কারাগারের যে ওয়ার্ডে ছিলেন, সেই ওয়ার্ডটিও লকডাউন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। সেখানে ৫২ জন বন্দী রয়েছেন বলে জানায় কারা কর্তৃপক্ষ।
এর পর ৭ মে লকডাউন করা ওই কারা ওয়ার্ডে থাকা ৫২ জন বন্দীসহ কারাগার থেকে ৫৫ জনের করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ল্যাবে পাঠায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এর মধ্যে গত রোববার রাতে ২৬ জন বন্দীর করোনা পরীক্ষার ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একজনের ফল ‘পজিটিভ’ এসেছে। এ ছাড়া রংপুরে পাঠানো ওই বন্দীর সংস্পর্শে আসা কারাগারের চারজন কারারক্ষী, জেলা পুলিশের দুজন সদস্য, পঞ্চগড় সদর হাসপাতালের একজন নার্স, একজন ওয়ার্ডবয়সহ ১০ জন হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। পর্যায়ক্রমে তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষা করা হবে বলে জানান সিভিল সার্জন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, সোমবার সকাল পর্যন্ত পঞ্চগড় জেলা থেকে ৬৫৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য রংপুর ও দিনাজপুরের ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৫৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষার ফল পাওয়া গেছে। যার মধ্যে জেলায় ১৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রত্যয় হাসান বলেন, রোববার করোনা শনাক্ত হওয়া ওই ব্যক্তি সম্প্রতি লকডাউন হওয়া ঢাকার ইসকন মন্দিরে গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ৬ মে উপজেলার পামুলী ইউনিয়নের একটি গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে আসেন। ৭ মে তাঁর করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তাঁকে উপজেলা শহরের একটি বিদ্যালয় ভবনে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। প্রথম দিকে তাঁর শরীরে কিছুটা উপসর্গ থাকলেও বর্তমানে তিনি অনেক সুস্থ।