চাঁদা দাবি এবং হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে নড়াইলের সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) সাদিরা খাতুন, লোহাগড়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাছির উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীদের নামে মামলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার লোহাগড়া আমলি আদালতে ওই মামলাটি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন নড়াইল জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) মো. আলমগীর সিদ্দিকী।
মো. আলমগীর সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দিন মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।’ মামলার বাদীর আইনজীবী মো. রিয়াজুল ইসলাম খানও প্রথম আলোকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মামলায় ৩৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। কোনো অজ্ঞাত আসামি করা হয়নি।
মামলার বাদী মো. শরিফুল ইসলাম নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের পারশালনগর গ্রামের মো. মনির হোসেনের ছেলে। লোহাগড়া উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব টিপু সুলতান জানান, শরিফুল ইসলাম উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।
এ বিষয়ে লোহাগড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জি এম নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা মামলার বিষয়টি জানি না। এ ধরনের মামলা দেওয়া সঠিক হয়নি।’
মামলার ১ নম্বর আসামি নড়াইলের সাবেক এসপি সাদিরা খাতুন বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ ও ২ নম্বর আসামি লোহাগড়া থানার সাবেক ওসি মো. নাছির উদ্দিন মাগুরার শালিখা থানার ওসি হিসেবে কর্মরত আছেন। এই মামলায় লোহাগড়া থানার সাবেক পরিদর্শক (তদন্ত) হারান চন্দ্র পাল, উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান ও সবুর এবং এএসআই মাজহারুলকে আসামি করা করা হয়েছে।
এ ছাড়া মামলায় লোহাগড়া উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা ইয়াসমিন, লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদুল হাসান, উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউর শিকদার, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজীব মুসল্লি, লোহাগড়া পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈমুর রহমান, লোহাগড়া পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মাহামুদুল হাসানসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা বিএনপি নেতাদের ভয়ভীতি দেখাত ও মামলা জড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করত। চাঁদা না পেয়ে বিএনপি নেতা–কর্মীদের ওপর রাগান্বিত ছিল। ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর লোহাগড়া আর্মি ক্যাম্পের সামনে বিএনপির কর্মসূচি ছিল। সেখানে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশি অস্ত্র নিয়ে আসামিরা বিএনপির লোকজনের ওপর হামলা করে। ১ নম্বর আসামির হুকুমে তাঁদের কুপিয়ে জখম করে ও বেধড়ক মারধর করে। এ সময়ে বিএনপির নেতা–কর্মীরা কাজী সুলতানুজ্জামানের বাড়িতে ঢুকে পড়েন। সেখানে গিয়ে হামলা করে বিএনপির লোকজনের ২৫-৩০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন আসামিরা। এতে ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় ও কিছু মালামাল লুট করে নিয়ে যান। তখন মামলা করতে গেলে লোহাগড়া থানা মামলা নেয়নি।
লোহাগড়া থানার সাবেক ওসি মো. নাছির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলার বিষয়টি শুনেছি। সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা করেছে। এসপি সাদিরা খাতুন অত্যন্ত সৎ মানুষ। তিনি কারও কাছ থেকে এক কাপ চা–ও খান না। আমি কখনো চাঁদা দাবি করিনি ও একটি টাকাও নিইনি।’
নাছির উদ্দিন জানান, সেদিন লোহাগড়ার কুন্দশী মোড়ে বিএনপি কর্মসূচি পালন করছিল। সে কর্মসূচিতে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) আগেই অনুমতি দিয়েছিল। পুলিশের সহযোগিতায় বিএনপির কর্মসূচি যথাযথভাবে পালন হয়। কর্মসূচির পর ছাত্রলীগের ছেলেরা মোটরসাইকেলে মহড়া দিয়ে বিএনপি নেতা কাজী সুলতানুজ্জামানের বাড়িতে হামলা করেন। খবর পেয়ে টহল পুলিশ সেখানে যায়। পুলিশ সেখানে গিয়ে কাউকে পায়নি।