নড়াইলের সাবেক এসপির বিরুদ্ধে এক নারীর ভিডিও বক্তব্য ভাইরাল

নড়াইলের সাবেক একজন পুলিশ সুপারসহ (এসপি) কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক নারীর ভিডিও বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই নারীর অভিযোগ, তাঁর ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিনি মামলা করেছিলেন। কিন্তু মামলাটি সাজানো বলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এদিকে ওই অ্যাসিড মামলার আসামিরা মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এ সময় তাঁরা দাবি করেন, অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনাটি সাজানো নাটক। আর সাবেক এসপিসহ পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওই নারী অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২৮ বছর বয়সী ওই নারীর বাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার একটি গ্রামে। গত বছরের ১৮ আগস্ট নড়াইল সদর থানায় তাঁর বোন মামলাটি করেন। এতে মোট সাতজনকে আসামি করা হয়। আসামিরা ওই নারীর প্রতিবেশী ও একই বংশের লোক। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ১৭ আগস্ট রাত নয়টার দিকে গ্রামের রাস্তায় ওই নারীর ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হয়। এতে তাঁর পিঠের একটি অংশ পুড়ে যায়। আসামিদের সঙ্গে লেনদেন নিয়ে ওই নারীর দ্বন্দ্ব ছিল। এর জেরেই তাঁরা এ ঘটনা ঘটান বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। পরে মামলাটি সাজানো বলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। অবশ্য, ওই নারী আদালতে নারাজি দেন। পরে আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

ওই নারীর বক্তব্যসংবলিত একটি ভিডিও ফেসবুকে সোমবার প্রকাশ করেছেন এক ব্যক্তি। মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেটি শেয়ার করা হয়েছে ৮৯০ বার। ভিডিওর নিচে মন্তব্য পড়েছে ১৫৩টি। এ ছাড়া একটি ইউটিউব চ্যানেলে ওই নারীর সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে। তিন ঘণ্টার মধ্যে সেটি দেখা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার বার। ভিডিও বক্তব্যে মামলার অভিযোগের পাশাপাশি পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হয়রানির নানা অভিযোগ তুলেছেন ওই নারী। বিষয়টি নিয়ে নড়াইলে এখন ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।

মামলাটি তদন্ত করেছিলেন নড়াইল সদর থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) সুকান্ত সাহা। তিনি এখন নড়াইলে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক। আর নড়াইলের ওই সাবেক পুলিশ সুপারের নাম জসিম উদ্দিন। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে (সিএমপি) কর্মরত। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মঙ্গলবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই নারীর পেছনে প্রভাবশালী একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধন আছে। অযথা আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’

জসিম উদ্দিন আরও বলেন, অ্যাসিড মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতের নির্দেশে ওই নারীর কাপড়চোপড় জব্দ করে ঢাকায় সিআইডিতে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে সিআইডির বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে সেটি অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনা নয় বলে উল্লেখ করা হয়। তা ছাড়া ওই নারীরা দুই বোন চলার পথে পরামর্শ করেছিলেন, ব্যাটারির অ্যাসিড। বেশি যন্ত্রণা হবে না। একটু জ্বলবে মাত্র। এ কথা ৭২ বছর বয়সী এক নারী শুনতে পান। ওই নারীসহ চারজন আদালতে জবানবন্দি দেন। তাতে বলেন, মামলাটি ছিল সাজানো। এর ভিত্তিতে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে নড়াইল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন অ্যাসিড মামলার আসামি ও তাঁদের স্বজনেরা। লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান অ্যাসিড মামলার আসামি বিপ্লব মোল্লা। উপস্থিত ছিলেন কলোড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্বাস আলী সরদারসহ কয়েকজন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পাওনাদারের টাকা যাতে ফেরত দিতে না হয়, সে জন্য ওই নারী অ্যাসিড নিক্ষেপের মামলা সাজিয়েছেন। অ্যাসিড মামলার অপর আসামি জুয়েল মোল্লা ওই নারীর কাছে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা পাবেন। ওই টাকা ফেরত না দেওয়ায় জুয়েল আদালতে চেক প্রত্যাখ্যানের মামলা করেন। এরপরই ওই নারী মামলাটি সাজিয়েছেন।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে ওই নারী ও তাঁর বোনের মুঠোফোন নম্বরে ফোন দিলে বন্ধ পাওয়া যায়।