নৌকার সমর্থকেরা গ্রামছাড়া

দিনে খোলা মাঠে দলবেঁধে থাকেন তাঁরা। সেখানে রান্না-খাওয়া চলে। রাতে বিভিন্ন বাড়িতে ঘুমাতে যান।

নির্বাচন–পরবর্তী সহিংসতায় বাড়িছাড়া শতাধিক মানুষ। তাঁরা দিনের বেলা খোলা মাঠে দলবেঁধে থাকেন। সেখানেও রান্না-খাওয়া চলে। গত বৃহস্পতিবার শৈলকুপা উপজেলার পিড়াগাতি গ্রামে

তাঁরা ইউনিয়ন পরিষদর (ইউপি) নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছিলেন। তবে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের হামলার কারণে তাঁরা গ্রামছাড়া। এ ঘটনা ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউনিয়নের বাকড়ি গ্রামের।

ওই গ্রামের অন্তত শতাধিক মানুষ এক সপ্তাহ ধরে গ্রামছাড়া। প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে অন্য গ্রামে থাকছেন তাঁরা। সেখানেও প্রতিপক্ষের হামলার আশঙ্কায় আছেন তাঁরা। দিনের বেলা খোলা মাঠে দলবেঁধে থাকেন। সেখানেও রান্না-খাওয়া চলে। রাতে বিভিন্ন বাড়িতে ঘুমাতে যান।

হরিশংকরপুর ইউপিতে গত ২৬ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ হয়। এতে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থী ছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন। তাঁকে হারিয়ে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন দলের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী খন্দকার ফারুকুজ্জামান।

খন্দকার ফারুকুজ্জামান ওরফে ফরিদের বাড়ি ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নরহরিদ্রা গ্রামে। এ ওয়ার্ডের আরেকটি গ্রাম বাকড়ি। বাকড়ি কেন্দ্রে ভোটের সংখ্যা ২ হাজার ২০০। এর মধ্যে মোটরসাইকেল প্রতীকে ফারুকুজ্জামান পেয়েছেন ১ হাজার ৩০১ ভোট। নৌকা প্রতীকে পড়েছে ৪৮০ ভোট।

নৌকা প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভোটের পর বাকড়ি গ্রামের সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন নেমে এসেছে। ইউনিয়নের বেশ কয়েকজনের দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দুজন চালকের ভ্যান চালানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মাঠের ফসলও ক্ষতি করা হয়েছে। লুট করা হচ্ছে গাছের ফল। তিনি এসবের প্রতিকার ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দাবি করেন।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য খন্দকার ফারুকুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

বাকড়ি গ্রামের বাসিন্দা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নূর আমিন মিয়া বলেন, রাতে (২৬ ডিসেম্বর) ভোটের ফল ঘোষণার পর তাঁরা গ্রামে থাকতে পারেননি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের খুঁজেছেন ফারুকুজ্জামানের সমর্থকেরা। তিনি এক সপ্তাহ ধরে পাশের শৈলকুপা উপজেলার পিড়াগাতি গ্রামে পালিয়ে অবস্থান করছেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নবের আলী, নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য বদরুল হাসান, থানা যুবলীগের সদস্য মিজানুর রহমান প্রমুখ।

বাকড়ি গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘পিড়াগাতি গ্রামের মাঠে আমরা একসঙ্গে রয়েছি। দিনের বেলা মাঠে একজোট হয়ে থাকি, যেন প্রতিপক্ষ হামলা না করতে পারে। সবাই মিলে একসঙ্গে বাজার করে ফাঁকা মাঠে রান্না করে খাই। এভাবে দুই বেলা রান্না হয়। শীতের রাতে অসহনীয় কষ্টে পড়েছি। অসহায় অবস্থা দেখে তাঁদের থাকতে দিচ্ছেন। কিন্তু এভাবে আর কত দিন?’

গ্রাম না ছাড়ায় গত বৃহস্পতিবার অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য হাসান নেওয়াজসহ তিনজনকে পিটিয়ে জখম করা হয়। ওই তিনজন বর্তমানে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় হাসান নেওয়াজ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে বলা হয়েছে, ভোটের রাত থেকে বাকড়ি গ্রামে নৌকার সমর্থকদের ওপর হামলা শুরু হয়। খন্দকার ফারুকুজ্জামানের কর্মীরা তাঁদের ধাওয়া করেন। বাকড়ি গ্রামের আনারুল ইসলামসহ একদল সন্ত্রাসী এ হামলা চালায়।

এ বিষয়ে আনারুল ইসলাম বলেন, তাঁদের কেউ গ্রামছাড়া করেননি। তাঁরা নিজেরা ভয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। ভোটের পর একটু উত্তেজনা থাকে, তবে বর্তমানে অনেকটা শান্ত। তাঁরা এখন বাড়ি চলে এলেও কোনো সমস্যা হবে না।

এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ সোহেল রানা বলেন, নির্বাচনী সংঘাতের বিষয়ে তাঁরা একটি অভিযোগ পেয়েছেন। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ বাড়িছাড়া হলে তাঁদের ফিরে যেতে উদ্যোগে নেওয়া হবে।