নোয়াখালীতে বিবস্ত্র করে নারীকে নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার আরও ১

গ্রেপ্তার
প্রতীকী ছবি

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে (৩৭) বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানোর ঘটনায় আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গতকাল রোববার রাত ১০টার দিকে রহমত উল্লাহ (৪১) নামের ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এই ঘটনায় মোট দুজনকে গ্রেপ্তারের কথা আজ সোমবার সকালে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ হারুন অর রশীদ চৌধুরী।

থানা সূত্র জানায়, নির্যাতনের শিকার ওই নারী গতকাল বেগমগঞ্জ থানায় দুটি মামলা করেন। দুই মামলাতেই নয়জনকে আসামি করা হয়।

নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় গতকাল বিকেলে আবদুর রহিম (২০) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ওসি মুহাম্মদ হারুন অর রশীদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, নির্যাতনের শিকার নারী বাদী হয়ে বেগমগঞ্জ থানায় রাত পৌনে ১২টার দিকে পৃথক দুটি মামলা করেন। একটি মামলা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে। অন্যটি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে।

মামলার এজাহারের নারী উল্লেখ করেন, তাঁর স্বামীকে বেঁধে রেখে আসামিরা তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তাঁরা এ ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণা করেন। গত এক মাস ধরে তাঁরা এই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে তাঁকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাঁরা এই ভিডিও ছেড়ে দেন।

গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে এই ঘটনাটি ঘটে।

জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরই তাঁরা বিষয়টি জানতে পারেন। এবং তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেন। নির্যাতনের শিকার নারীকেও উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ওই নারীর ১৮ বছর আগে বিয়ে হয়। তাঁর স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় কয়েক বছর আগে তিনি বাপের বাড়ি চলে আসেন। তাঁর এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বাড়িতে ওই নারী ছেলে ও এক ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন। সম্প্রতি তাঁর স্বামী তাঁর কাছে আসা-যাওয়া করতে শুরু করেন। এ নিয়ে কয়েকজন যুবক আপত্তি জানিয়ে সেদিন ওই নারীকে নির্যাতন করেন। ঘটনার দিন ওই নারী তাঁর স্বামীর সঙ্গেই ছিলেন। নির্যাতনকারীরা তাঁর স্বামীকেও আটক করে নিয়ে যায়। পরে ওই নারীর ভাই ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে আনেন। ওই নারীর মা নেই। বাবাও দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন।

গতকাল বেলা তিনটার দিকে নির্যাতনের শিকার ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর পৈতৃক ভিটার বসতঘরে তালা ঝুলতে দেখা যায়। কথা হয় তাঁর চাচার সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এলাকার কিছু যুবক তাঁর ভাতিজিকে ‘খারাপ’ আখ্যায়িত করে ঘরে ঢুকে নির্যাতন করেছেন বলে তিনি শুনেছেন। তবে ঘটনার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না।

ওই চাচা আরও বলেন, বাড়িতে জায়গাজমি নিয়ে বিরোধের কারণে তাঁদের ভাইদের মধ্যে তেমন সখ্য নেই। এমনিতে তাঁর ওই ভাই বাড়িতে থাকেন না। ওই মেয়েই বাপের ঘরে থাকেন। নির্যাতনের ঘটনার পর থেকে বসতঘরে তালা ঝুলিয়ে তাঁরা কোথায় চলে গেছেন, কাউকে বলে যাননি।

বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ হারুন অর রশিদ চৌধুরী গতকাল বলেন, এক মাস আগে ওই নারী নির্যাতনের শিকার হলেও তিনি কিংবা তাঁর পরিবারের কেউ থানায় কোনো অভিযোগ করেননি। গতকাল দুপুরে বিষয়টি শোনার পর তিনি তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠান এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত আবদুর রহিম নামের একজনকে আটক করেন।