জোয়ারের পানিতে আবার কয়রার বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিতে ভাসা জ্বালানির কাঠ সংগ্রহ করছেন এক নারী। মদিনাবাদ, কয়রা, খুলনা। ২৭ আগস্ট
জোয়ারের পানিতে আবার কয়রার বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিতে ভাসা জ্বালানির কাঠ সংগ্রহ করছেন এক নারী। মদিনাবাদ, কয়রা, খুলনা। ২৭ আগস্ট

নোনা পানিতে ভাসছে কয়েক হাজার মানুষ

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) থেকে খুলনার কয়রায় রিং বাঁধ মেরামতের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। এ কথা জেনে আর স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধের কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না সাধারণ মানুষ।

ঠিকাদার নিয়োগ হওয়ায় বাঁধের জন্য বস্তা, বাঁশসহ আনুষঙ্গিক জিনিস সরবরাহ করতে অপারগতা প্রকাশ করছে পাউবো। এ কারণে কবে নাগাদ বাঁধ মেরামত করে এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ ঠেকানো যাবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কেউ। এমন পরিস্থিতির মধ্যে জোয়ারের পানিতে ভাসছে কয়রা উপজেলার হাজার হাজার মানুষ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে কয়রা উপজেলার ১৭টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের। জোয়ারের পানিতে ভাসছে তারা। অনেকে ঠাঁই নিয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে। আবার কেউ কেউ চলে যাচ্ছে অন্য কোনো স্থানে। নোনা পানির কারণে এলাকার কৃষিতেও বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে কয়রা উপজেলার কয়েকটি এলাকার বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। পরে এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে রিং বাঁধ দিয়ে এক মাসের মধ্যে লোকালয়ে জোয়ারের নোনা পানি প্রবেশ বন্ধ করতে সক্ষম হয়। ঠিক তিন মাস পর ২০ আগস্ট ওই রিং বাঁধ ভেঙে আবার প্লাবিত হয়েছে। বর্তমানে কয়রা সদর ইউনিয়নের ২ নম্বর কয়রা গ্রামের রিং বাঁধ ভেঙে পানিতে ডুবে আছে উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ কমপক্ষে ১০টি গ্রাম। অন্যদিকে উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের কাশিরহাটখোলা এলাকায় বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ছয়টি গ্রাম ও মহারাজপুর ইউনিয়নের দশাহালিয়া এলাকার বাঁধ ভেঙে পানির মধ্যে আছে ওই গ্রামের মানুষ।

ভাঙন এলাকায় আগে স্বেচ্ছাশ্রমে রিং বাঁধের জন্য কাজ করা এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, আগে বাঁধের জন্য কোনো টাকা বরাদ্দ ছিল না। মানুষ জোয়ারের পানি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে নিজেদের উজাড় করে দিয়েছেন। কোনো ধরনের আর্থিক সাহায্য ছাড়াই কাজ করেছেন দিনের পর দিন। ওই রিং বাঁধ দেওয়ার প্রায় তিন মাস পার হয়ে গেলেও পাউবো থেকে ওই বাঁধ মেরামতের জন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। রিং বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রায় এক কোটি টাকা বরাদ্দ করে একজন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে বলে তাঁরা জেনেছেন। কিন্তু ওই ঠিকাদার বাঁধের কোনো কাজই করেননি। সাধারণ মানুষই শুধু কষ্ট করে যাবে, আর টাকা ভোগ করবে অন্য মানুষ, তা হতে পারে না।

এ বিষয়ে কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে কয়রা উপজেলার ১৭টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের। আম্পানে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরপরই এলাকাবাসীকে নিয়ে ভাঙন এলাকায় স্বেচ্ছাশ্রমে রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকানো হয়েছিল। তিন মাস পার হয়ে গেলেও ওই বাঁধে কোনো কাজই করেনি পাউবো। অন্যদিকে দেখভালের জন্য যে ঠিকাদারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনিও সেখানে কোনো কাজ করেননি। ঠিকাদার নিয়োগ হওয়ায় পাউবো থেকেও বাঁধ মেরামতের জন্য বাঁশ, বস্তাসহ কোনো জিনিস সরবরাহ করা হচ্ছে না। অন্যদিকে এসব কারণে মানুষ এখন আর স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতে এগিয়ে আসতে চাইছেন না। কবে নাগাদ ওই বাঁধ মেরামত করা হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস জানান, পানিতে ডুবে যাওয়ায় কয়রার মানুষ খুবই বিপদের মধ্যে আছে। সদর ইউনিয়নের বেশির ভাগ সড়ক ও বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ মেরামত করার জন্য পাউবোকে অনুরোধ করা হয়েছে। জোয়ারের পানির উচ্চতা কিছুটা কমলেই হয়তো কাজ শুরু করবে পাউবো।

কয়রা উপজেলাটি সাতক্ষীরার পাউবো পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ-২–এর আওতায়। বাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, কয়রা যেসব এলাকায় আম্পানের সময় ভেঙে যায়, ওই সব এলাকার বাঁধ নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীকে। এ কারণে সেখানে পাউবোর কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। তবে জরুরি ভিত্তিতে কিছু এলাকায় কাজ করা হচ্ছে। আশা করা যায়, অল্প দিনের মধ্যেই বাঁধ মেরামত করে পানি আটকানো সম্ভব হবে। তবে কবে নাগাদ ওই কাজ শেষ হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।