বড় ছেলে কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার দুদিন পর মা রাজিয়া সুলতানার (৭৫) সংক্রমণ শনাক্ত হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ছেলের পথ ধরে তিনিও চলে গেলেন। গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে নোয়াখালী জেলার নোয়াখালী পৌরসভার সোনাপুর ইসলামিয়া রোড এলাকার বাড়িতে আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
আজ শুক্রবার সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক করোনাভাইরাস ফোকাল পারসন নীলিমা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
ওই বৃদ্ধাসহ গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণে নোয়াখালীতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দুজনের একজন পশ্চিম মাইজদী এলাকার এবং আরেকজন কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন দ্বিতীয় নমুনা পরীক্ষার নেগেটিভ ফলাফল আসার পর।
চিকিৎসক নীলিমা ইয়াসমিন বলেন, ৮ আগস্ট রাজিয়া সুলতানার নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পজিটিভ আসে। তিনি বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। গতকাল রাতে বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়। এর এক সপ্তাহ আগে গত ৬ আগস্ট রাজিয়া সুলতানার বড় ছেলে রফিক উল্যাহ (৫৭) করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে নোয়াখালী শহরের শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই বাড়িতে এখন ১১ জন সংক্রমিত। বাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে।
চিকিৎসক নীলিমা ইয়াসমিন আরও জানান, নোয়াখালী পৌরসভার পশ্চিম মাইজদী এলাকার বাসিন্দা ইফতেখার হোসেন (৬৭) নামের আরও এক ব্যক্তি একই সময়ে মারা গেছেন। গত বুধবার (১২ আগস্ট) নমুনা পরীক্ষা পজিটিভ আসার পর পরিবারের লোকজন তাঁকে ঢাকার মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও করোনা ফোকাল পারসন সঞ্জয় কুমার পাল জানান, নরোত্তমপুর ইউনিয়নের ফলাহারী গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেম জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে গত ২২ জুলাই হাসপাতালে এসে নমুনা দিয়ে যান। ২৪ জুলাই তাঁর সংক্রমণ শনাক্ত হয়। শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় পরিবারের লোকজন তাঁকে ঢাকার মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। ৮ আগস্ট মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আবুল কাশেমের দ্বিতীয় নমুনা পরীক্ষা করে ফলাফল নেগেটিভ পাওয়া যায়। তবে গতকাল রাতে তাঁর অসুস্থতা বেড়ে যায়। রাতে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এদিকে দ্বিতীয় নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ আসার পর মারা যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে নোয়াখালী শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামের কোভিড-১৯ হাসপাতালের সমন্বয়ক চিকিৎসক নিরুপম দাশ প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসার অর্থ এই নয়, রোগী সুস্থ হয়ে গেছেন। সংক্রমণে সম্ভবত ওই রোগীর ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এ কারণে তাঁর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।
এদিকে জেলা সিভিল সার্জন মাসুম ইফতেখার প্রথম আলোকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে আরও ৬৮ জনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৪৫। এর মধ্যে মারা গেছেন ৭৩ জন।