সন্ত্রাস, মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে রুখে দাঁড়ানোর দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে আজ মঙ্গলবার ‘নেত্রকোনা ট্র্যাজেডি দিবস’ পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে সকাল ১০টা ৪০ মিনিট থেকে ১০টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ৫ মিনিট স্তব্ধ ছিল নেত্রকোনা শহর।
এ সময় শহরের রাস্তায় চলেনি কোনো যানবাহন, হাঁটেননি কোনো পথচারী। সকাল ১০টা ৪০ বাজার সঙ্গে সঙ্গেই সবাই নিজ নিজ কাজ ফেলে রেখে রাস্তায় নেমে আসেন। সড়কে যানবাহনগুলো চলাচল থামিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। দোকানিরাও এ সময় নেমে আসেন রাস্তায়। পথচারীরাও থেমে যান। তাঁরা শ্রদ্ধা জানান ১৫ বছর আগে বোমা হামলায় নিহত ব্যক্তিদের প্রতি।
২০০৫ সালের ৮ ডিসেম্বর সকালে নেত্রকোনা শহরের অজহর রোড এলাকায় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী জেলা সংসদ কার্যালয়ের সামনে ওই বোমা হামলায় নিহত হন আটজন। সেখানে ৯ ডিসেম্বর নেত্রকোনা হানাদারমুক্ত দিবস পালন উপলক্ষে উদীচীর প্রস্তুতি চলছিল। জেএমবির আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্রাণ হারান নেত্রকোনা উদীচীর সহসাধারণ সম্পাদক খাজা হায়দার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সুদীপ্তা পাল, মোটরসাইকেল মেরামতকারী যাদব দাস, পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী রানী আক্তার, মাছ বিক্রেতা আফতাব উদ্দিন, শ্রমিক রইছ মিয়া ও ভিক্ষুক জয়নাল মিয়া। এ ছাড়া আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী আল বাকি মোহাম্মদ কাফিও নিহত হন। আহত হন অর্ধশতাধিক।
দিবসটি উপলক্ষে আজ সকাল নয়টায় কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন ও ব্যক্তি অজহর রোডে উদীচী কার্যালয়ের পাশে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। সকাল ১০টায় ছোটবাজার এলাকায় মানববন্ধন হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন নেত্রকোনা ট্র্যাজেডি দিবস উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত ঘোষ। উদীচীর যুগ্ম সম্পাদক সঞ্জয় সরকারের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামলেন্দু পাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক, মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট সদর উপজেলার সাবেক কমান্ডার আইয়ুব আলী, উদীচীর সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক অসিত ঘোষ, জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাহেজা বেগম, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ভজন সরকার, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মারুফ হাসান খান, নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ এমরান প্রমুখ। পরে স্তব্ধ নেত্রকোনা পালন শেষে শহীদদের কবর জিয়ারত, শ্মশানের স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শহীদদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হয়।
ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আপিল
২০০৫ সালের ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে নেত্রকোনা মডেল থানায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা করে। এর মধ্যে বিস্ফোরক আইনে আসামি জেএমবির কমান্ডার সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন ওরফে সোহেল, সদস্য আসাদুজ্জামান চৌধুরী ওরফে পনিরের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এ ছাড়া ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আসামি আসাদুজ্জামান চৌধুরী, সালাউদ্দিন ও ইউনুছ আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২। মামলার অপর আসামি সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানির অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া বাংলা ভাইয়ের স্ত্রী ফারজানাকে খালাস দেওয়া হয়। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামি আসাদুজ্জামান আপিল করেন। পাশাপাশি আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) শুনানির জন্য হাইকোর্টে আসে। শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন। জেএমবির সদস্য আসাদুজ্জামান হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। পরে ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ আপিল বিভাগ খারিজ করে দেয়। ফলে, সর্বোচ্চ সাজার আদেশই বহাল থাকে। পরে এই আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেন আসাদুজ্জামান। গত বছরের ১৪ নভেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বের আপিল বেঞ্চ আবেদনটি খারিজ করে দেন।