নেত্রকোনার কলমাকান্দাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় আবারও পানি বাড়ছে। গত রোববার রাত থেকে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ছে। এর মধ্যে আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে উব্দাখালী নদীর পানি কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার অন্তত ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটির কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত জেলার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, বারহাট্টা, মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরীতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে এসব এলাকায় প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে কলমাকান্দার ৩৫ হাজার মানুষ। ইতিমধ্যে কলমাকান্দা সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন।
এক সপ্তাহ আগেও জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে সাতটি উপজেলায় দ্বিতীয়বার বন্যার পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। তখন অন্তত ৯৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পানি বেড়ে কলমাকান্দার আটটি ইউনিয়নের প্রায় ২১০টি গ্রামের ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নতুন করে বন্যার পানিতে বীজতলা, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত তলিয়ে গেছে। গবাদিপশু নিয়ে মানুষ বিপদে পড়েছে। কলমাকান্দা-ঠাকুরাকোনা সড়কের বাহাদুরকান্দা এলাকায় ডুবে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
জুনের শেষ দিকে অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টার আংশিক এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়। এর দুই সপ্তাহ ব্যবধানে আবারও বন্যা হয়। তখন প্রায় ৯৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। বন্যার কারণে আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি বাঁধ, উঁচু স্থানসহ সড়কে আশ্রয় নেওয়া মানুষের খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দেয়। টানা পাঁচ দিন ধরে কলমাকান্দার সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল। সেই বন্যায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার কাঁচা–পাকা সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ওঠে।
১৪ জুলাই থেকে বন্যার পানি কমে তিন দিন পর গত শুক্রবার থেকে পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়। কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে আবারও জেলার কংস, সোমেশ্বরী, উব্দাখালী, ধুনুসহ প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান আজ সকালে বলেন, জেলার সব কটি প্রধান নদ-নদীর পানি একটু একটু করে বাড়ছে। এর মধ্যে উব্দাখালী নদীর পানি কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে অন্য সব পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।
প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান জানান, দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদীর বিজয়পুর পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৫ দশমিক ৮৯ মিটার। সেখানে আজ পানি প্রবাহিত হচ্ছে ১৪ দশমিক ২৫ মিটার দিয়ে। নদীর দুর্গাপুর পয়েন্টে বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৫৫ মিটার, সেখানে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ১১ দশমিক ৮৭ মিটার দিয়ে। কংস নদের জারিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৫৫ মিটার, সেখানে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ৯ দশমিক ৯৫ মিটার দিয়ে। আর ধনু নদের খালিয়াজুরী পয়েন্টে বিপৎসীমা ৭ দশমিক ১২ মিটার, সেখানে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ৬ দশমিক ৭৫ মিটার দিয়ে।
আজ মোহনগঞ্জে ২৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার, সদর উপজেলায় ১৭ মিলিমিটার, জারিয়ায় ৩০ মিলিমিটার ও দুর্গাপুরে ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।
জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে আবারও কিছু পানি বেড়ে কলমাকান্দায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে বৃষ্টি না হলে পানি কমে যেতে পারে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যায় এ পর্যন্ত ১৬৫ মেট্রিক টন চাল, তিন হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ সাড়ে চার লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৪০০ মেট্রিক টন জিআর, নগদ আট লাখ টাকা, শিশুখাদ্য কেনার জন্য দুই লাখ টাকা, গোখাদ্য কেনার জন্য দুই লাখ টাকা এবং দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।