টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নেত্রকোনার নিম্নাঞ্চলের পাকা বোরো ধানের খেত প্লাবিত হচ্ছে। রোববার বিকেলে কলমাকান্দা উপজেলার বাহাদুরকান্দা এলাকায়
টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নেত্রকোনার নিম্নাঞ্চলের পাকা বোরো ধানের খেত প্লাবিত হচ্ছে। রোববার বিকেলে কলমাকান্দা উপজেলার বাহাদুরকান্দা এলাকায়

নেত্রকোনার ৬ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আর টানা বর্ষণে নেত্রকোনার নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জেলার কলমাকান্দা, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ, মদন, কেন্দুয়া, সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কয়েক শ হেক্টর জমির পাকা বোরো ধান তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে বেশ কিছু পুকুরের মাছ। গ্রামীণ রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। আজ রোববার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

স্থানীয় বাসিন্দা, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার কংস, সোমেশ্বরী, উব্দাখালী, ধনু, মগড়াসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। উব্দাখালী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে পানির বিপৎসীমা ধরা হয় ৬ দশমিক ৫৫ মিটার। সেখানে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ৬ দশমিক ৮৩ মিটার। অর্থাৎ বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

পানিতে কলমাকান্দার বড়খাপন, পোগলা, কৈলাটিসহ প্রায় আটটি ইউনিয়ন; দুর্গাপুরে গাঁকান্দিয়া, কাকৈইগড়া, চণ্ডীগড়; বারহাট্টার চিরাম, বাউসী, রায়পুর; মদনের গোবিন্দ্রশ্রী, ফতেপুর, মাঘান; সদরের কালিয়াড়াগাবড়াগতি; মোহনগঞ্জের তিতুলিয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ৪৬০ হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ।

বারহাট্টার সিংধা গ্রামের কৃষক মুখলেছ মিয়া বলেন, বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের কয়েক শ একর জমির ধান পানিতে তলিয়ে যায়। এ ছাড়া প্রায় ১২টি পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। চিরাম গ্রামের কৃষক আরিফুল ইসলাম বলেন, গ্রামে পানিতে অনেক ফসল তলিয়ে গেছে। প্রায় ৪৫ ভাগ ধান কাটার বাকি।

বারহাট্টার ভাটিপাড়া গ্রামের তমাল আজাদ ও আশিয়ল গ্রামের মকরম আলী বলেন, বন্যার পানিতে তাঁদের পাঁচ একর জমির পাকা ধান তলিয়ে গেছে। এলাকায় ধান কাটার শ্রমিক মিলছে না। বাইরের শ্রমিক এনে দৈনিক এক হাজার টাকা মজুরি দিয়ে ধান কাটাতে হচ্ছে। এখনো যেসব খেতের ধান পানির ওপরে মাথা উঁচিয়ে আছে, শ্রমিকেরা কেবল সেসব ধানই কাটছেন। সম্পূর্ণভাবে তলিয়ে যাওয়া জমির ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া রোদ না ওঠায় মাড়াই করা ধান শুকানো যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে কম দামে ফরিয়াদের ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।

জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক এফ এম মোবারক আলী প্রথম আলোকে বলেন, কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, বন্যার পানিতে ৪৫০ হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে প্রায় ১৫০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। ফসলের বড় ধরনের ক্ষতি হবে না।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, কলমাকান্দা, মোহনগঞ্জ ও মদনে বেশ কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি ঢুকছে। তবে দুটি স্কুল ছাড়া অন্য স্কুলগুলো খোলা রয়েছে।