‘নেতারা আমাগো হাত–পায়ে ধরে, এইডা নির্বাচনের সৌন্দর্য’

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী পোস্টারে ছেয়ে গেছে সড়ক। মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ পাক্কারোড এলাকায়
ছবি: দিনার মাহমুদ

স্বাধীনতার পর নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ চুনকারের নির্বাচনী কর্মী ছিলেন শঙ্কর চন্দ্র। সেই সময়ের তরুণ শঙ্কর এখন বার্ধক্যে। তবে সেই নির্বাচনের অনেক ঘটনা এখনো তাঁর স্মৃতিতে স্পষ্ট।

স্মৃতি থেকে শঙ্কর চন্দ্র বললেন, ‘চুনকা সাব শরীরে ছোটখাটো মানুষ আছিলেন, কিন্তু আদব তমিজে (আচরণে) আছিলেন অনেক বড়। মানুষরে বুকে জড়াইয়া ধরতেন, মুরব্বিগো পায়ে হাত দিয়া আশীর্বাদ নিতেন। এমন না যে নির্বাচনের আগে হাতে–পায়ে ধইরা ভোট চাইল আর ভোট শেষ অইলে আসমানের চান হইয়া গেল। উনি সব সময়ই মানুষের হাত–পায়ে ধইরা কথা কইতেন। নির্বাচন আসার পর থেইকা নেতারা আমাগো কাছে ছুইটা আসতাছে। হাত–পায়ে ধইরা তারা আশীর্বাদ চায়। বিষয়ডা আমাগো ভালো লাগে। এইডাই নির্বাচনের সৌন্দর্য। তারা যেন নির্বাচনের পরেও জনগণরে গুরুত্ব দেয়।’

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের দেওভোগ এলাকায় থাকেন শঙ্কর চন্দ্র। ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নারায়ণগঞ্জের সিটি নির্বাচনের বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছেন তিনি। স্বাধীনতার পর রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রতি মনোযোগ ছিল। প্রতিটি নির্বাচনই তাঁর কাছে উৎসব মনে হয়। শঙ্কর চন্দ্র মনে করেন, নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে জনগণের অমর্যাদা হয়। দীর্ঘ আড্ডায় সে কথাই বলছিলেন বারবার।

‘নির্বাচন মানে জনগণের হাতে ক্ষমতা দেওয়া, মানে আমি যারে খুশি বসাইতে পারি, যারে খুশি বাদ দিতে পারি। এইডা একটা ক্ষমতার বিষয়। নির্বাচন না হইলে আমাগো এই ক্ষমতা থাকে না। নেতারাও আমগো কাছে আসে না, আমাগো পাত্তা দেয় না। এই যে নেতারা ভোটারগো হাত–পায়ে ধরে, এইডার একটা আলাদা গুরুত্ব আছে। নির্বাচনডারে উৎসব মনে অয়। তাগোর স্মরণে আসে, আমাগো (ভোটার) ছাড়া তাগো (নেতার) গতি নাই, তহন তারা পাঁচ বছর পরের ভোটের লাইগা হইলেও নিজেগরে নিয়ন্ত্রণে রাখে। এইডাই নির্বাচনের সৌন্দর্য।’ এসব কথা শঙ্কর চন্দ্র একের পর এক বলে গেলেন।

নিজের বাড়ির পাশে কেন্দ্র হলেও সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি শঙ্কর। এ নিয়ে তাঁর ক্ষোভও আছে।

নিজের বাড়ির পাশে কেন্দ্র হলেও সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি শঙ্কর। এ নিয়ে তাঁর ক্ষোভও আছে। তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অতীতের মতো এবারও নিরপেক্ষ হবে বলেই তাঁর বিশ্বাস।

দেওভোগ জিওস পুকুর এলাকায় কথা হয় কমলা রানী, হরিদাসী বালা ও শ্যাম সুন্দর বর্মণের সঙ্গে। তাঁরা জানালেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন হওয়ার ১০ বছরে নারায়ণগঞ্জ নগরে দৃশ্যমান নানা উন্নয়ন হলেও বড় পুকুর হিসেবে পরিচিত দেওভোগ জিওস পুকুরের সংস্কার কাজ হয়নি। আগামীর জনপ্রতিনিধিদের কাছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই পুকুর সংস্কার চান তাঁরা।

নির্বাচন নিয়ে বেসরকারি চাকরিজীবি শ্যাম সুন্দর বলেন, ‘নির্বাচন ভালো হবে। তবে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলরের সঙ্গে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর বিরোধ চলছে। যেকোনো সময় তাঁদের সমর্কদের মধ্যে সংঘর্ষ হতে পারে, আমরা সেটা চাই না।’

হরিদাসী বালা বলেন, নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই জিওস পুকুরের মালিকানাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিরুদ্ধে তাঁর দলের লোকেরাই ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বিব্রত। তিনি আরও বলেন, ‘পুকুরের মালিকানা যারই হোক, আমরা চাই পুকুরটা যেন মানুষের কাজে লাগে। এটার যেন একটা সমাধান হয়। ধর্মে ধর্মে যেন ঘৃণা না ছড়ায়। নির্বাচন চইলা গেলেও মানুষের মনে কিন্তু ঘৃণা–হিংসা থাইকা যায়। এটা ভালো কিছু না।’ আগে কখনো ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট না দেওয়ায় এই পদ্ধতি নিয়ে ভয় আছে তাঁর। তিনি চান নির্বাচনের আগেই যেন ইভিএম বিষয়ে ভোটারদের জানানো হয়।