কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রত্যক্ষ ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে বলে তোড়জোড় করে ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হয়। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির পক্ষ থেকেও একই প্রতিশ্রুতি আসে। তবে সম্মেলনের কয়েক দিন আগ থেকে কর্মী-সমর্থকদের বদ্ধমূল ধারণা হয়, প্রত্যক্ষ ভোটে নেতা নির্বাচন করা হচ্ছে না, হবে ‘নেতাদের ইচ্ছায়’। কর্মীরা আরও ধারণা করছিলেন, উপজেলার শীর্ষ নেতৃত্বে পুরোনো দুজনকেই রাখা হচ্ছে।
আজ বুধবার হাওর–অধ্যুষিত উপজেলাটির আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষে কর্মী-সমর্থকদের ধারণাই সত্য হলো। ভোটে নয়, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে দলের প্রভাবশালী নেতাদের ইচ্ছার প্রভাব ছিল স্পষ্ট।
সভাপতি করা হয়েছে আগের কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক হায়দারীকে। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ রাজনীতিক। আর সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন শহিদুল ইসলাম। তিনি আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা পরিষদের টানা দুবারের চেয়ারম্যান।
এদিকে নতুন কমিটিকে বেশির ভাগ নেতা-কর্মী স্বাগত জানিয়েছেন। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ছোট একটি অংশ বিষয়টিকে সহজভাবে নিতে পারেনি। মোস্তবা আরিফ খান সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সম্মেলনে তিনি সভাপতি প্রার্থী হন। মোস্তবা আরিফ খান বলেন, ‘শুরু থেকেই চেয়ে আসছিলাম, নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় যেন তৃণমূলের মতামত গুরুত্ব পায়। এসে ‘‘তৃণ’’ খুঁজে পেলাম না। আর দেখলাম ‘‘মূলকে’’ সমূল উৎপাটন করে ফেলা হয়েছে।’
দলীয় সূত্র জানায়, জেলার তিন হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম, মিঠামইন ও ইটনা নিয়ে সংসদীয় আসন কিশোরগঞ্জ-৪। এ আসনে স্বাধীনতা–পূর্ব সময় থেকে রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগপর্যন্ত সংসদ সদস্য ছিলেন মো. আবদুল হামিদ। বর্তমানে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতির ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ। মূলত হাওরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির একক নিয়ন্ত্রক রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্যরা।
অষ্টগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০০৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। ২০১২ সালে সভাপতি সৈয়দ আবদুল নইম মারা যাওয়ার পর থেকে ফজলুল হক হায়দারী দলটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ১৭ বছর পর সম্মেলনের তারিখ ঘোষিত হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দেয়।
শুরুতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থী মাঠে সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু সম্মেলনের দিন যতই এগিয়ে আসতে থাকে, প্রতিদ্বন্দ্বীরা একে একে নিজেদের সরিয়ে নিতে থাকেন। এর ফলে কর্মী-সমর্থকদের মনে স্পষ্ট ধারণা হয়, আগের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকই নতুন কমিটিতেও থাকছেন। এ কারণে ওপর মহলের ইঙ্গিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ওপর মহল বলতে কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যকে বোঝানো হয়েছে। আজ কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে কর্মী-সমর্থকদের ধারণাই সত্য হয়েছে।
সম্মেলনের শেষ সময় পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক পদে শহিদুল ইসলামের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে টিকে ছিলেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম। তাঁর দাবি ছিল, প্রত্যক্ষ ভোটে নেতা নির্বাচনের। না হওয়ায় হতাশ হয়েছেন তিনি। রফিকুল বলেন, ‘ভোটে হলে ভালো হতো। তখন আমাকে আটকে রাখা যেত না।’
দুপুর ১২টায় অষ্টগ্রাম হেলিপ্যাড মাঠে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. জিল্লুর রহমান। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের। তিনি উপস্থিত হতে না পারায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা।
এতে স্থানীয় সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেন, কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
উদ্বোধনের আগেই অন্তত ১০ হাজার মানুষের উপস্থিতিতে সম্মেলনস্থল পূর্ণ হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় অধিবেশনে নেতা নির্বাচন করা হয়। এতে সময় নেওয়া হয় সর্বোচ্চ ২০ মিনিট। জানতে চাইলে নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দলের প্রতি আনুগত্য, ত্যাগ, শ্রমের এতটুকু কম নেই। দীর্ঘদিন জনতার পাশে ছিলাম বলেই দল বারবার আমার ওপর আস্থা রাখে।’
প্রত্যক্ষ ভোট না হওয়ার বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. জিল্লুর রহমানের ভাষ্য, দুই নেতাকে ফিরে পেতে উপস্থিত হাজার হাজার কর্মী হাত উঠিয়ে সমর্থন দিয়েছেন। ফলে আর ভোটের প্রয়োজন মনে হয়নি।