স্বশিক্ষিত কৃষিবিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদের উদ্ভাবন এবার চিকন ধান। তাঁর দাবি, এটা পোলাওর চাল চিনিগুঁড়ার মতোই চিকন, তবে চিনিগুঁড়ার চেয়ে লম্বা। দেশের ঐতিহ্যবাহী দাদখানি এবং তথাকথিত মিনিকেটের চেয়ে এ চাল অনেক চিকন বলেও দাবি করেছেন নূর মোহাম্মদ। গত ২৫ এপ্রিল তাঁর গবেষণামাঠে ধান কাটা হয়েছে। এ সময় রাজশাহী ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আঞ্জুমান আরা উপস্থিত ছিলেন।
নূর মোহাম্মদের শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো সনদ নেই, তবে আছে ধান নিয়ে নতুন নতুন উদ্ভাবন। সংকরায়ণ করে একের পর এক নতুন ধান উদ্ভাবন করছেন তিনি। স্বশিক্ষিত এই বিজ্ঞানীর কাজ আমলে নিয়েছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরাও। ধানগুলো জাত হিসেবে স্বীকৃতির অপেক্ষায় রয়েছে। কৃষি উৎপাদনে সাফল্যের জন্য নূর মোহাম্মদ ২০০৫ সালে পান রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক। সেরা কৃষি উদ্ভাবন ক্যাটাগরিতে তীর-প্রথম আলো কৃষি পুরস্কার-২০১৮ পেয়েছেন এই কৃষিবিজ্ঞানী।
নূর মোহাম্মদের বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলার গোল্লাপাড়া গ্রামে। দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। বরেন্দ্রভূমিতে প্রায় প্রতিবছরই খরায় নষ্ট হয়ে যায় ধান। সেই ধান রক্ষা করতেই কাজে লেগে যান তিনি। নিজের মাটির ঘরটাকে বানিয়ে ফেলেন গবেষণাগার। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান হেলাল উদ্দিনের সাহচর্য পান নূর মোহাম্মদ। সেখানে হাতেকলমে শেখেন অনেক কিছু।
এ পর্যন্ত সংকরায়ণের পর নূর মোহাম্মদের কৌলিক সারির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই শতাধিক। এগুলোর মধ্যে চার-পাঁচটি ধান জাত হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এর আগে তিনি খরাসহিষ্ণু, সুগন্ধি ও স্বল্পজীবনকালের ধান উদ্ভাবন করেছেন।
এবার দেশের সবচেয়ে চিকন ধান উদ্ভাবনের দাবি নূর মোহাম্মদের। গত ছয় বছরের গবেষণায় তিনি এই ধান উদ্ভাবন করেছেন।
নূর মোহাম্মদ বলেন, দেশের কোনো চিকন ধান বিঘায় ১০-১২ মণের বেশি হয় না। তাঁর উদ্ভাবিত নতুন এই ধানের গড় ফলন হবে বিঘায় প্রায় ২১ মণ। আমন ও বোরো—দুই মৌসুমেই এই ধান চাষ করা যায়। তবে বোরো মৌসুমে ফলন বেশি। তিনি বলেন, দেশের সবচেয়ে চিকন ধান (পোলাওর জন্য) চিনিগুঁড়ার মতোই তাঁর ধান চিকন কিন্তু চিনিগুঁড়ার চেয়ে লম্বা। সুগন্ধি না হলেও এই ধানের ভাত খেতে ভালো লাগবে।