পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) উপাচার্য মো. রোস্তম আলীর বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এক শিক্ষক। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে পাবনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ অভিযোগ করেছেন, উপাচার্যের নির্দেশে কর্মকর্তা–কর্মচারীরা তাঁকে লাঞ্ছিত করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ বলেন, উপাচার্য মো. রোস্তম আলীর মেয়াদকাল প্রায় শেষের দিকে। ফলে তিনি তড়িঘড়ি করে বিভিন্ন বিভাগে প্রচুর নিয়োগপ্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিন মাস আগে গণিত বিভাগে প্রভাষকের দুটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। উপাচার্য নিজে এই নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি। শিক্ষক হারুন-অর-রশিদকে বোর্ডের সদস্য করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে হারুন-অর-রশিদের স্ত্রী থাকায় তিনি মৌখিকভাবে দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়ার কথা উপাচার্যকে বলেছেন। কিন্তু উপাচার্য তাঁকে দায়িত্বে রেখেই বৃহস্পতিবার নিয়োগ পরীক্ষার দিন ধার্য করেন। তবে নিয়োগপ্রক্রিয়ার কোনো বিষয়ই তাঁকে জানাননি।
হারুন–অর–রশিদ বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে নিয়োগ পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু হলে তিনি উপাচার্যের কার্যালয়ে যান। তিনি উপাচর্যর সঙ্গে দেখা করার কথা বলেন। তবে উপাচার্যের কার্যালয়ে দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা তাঁকে কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেননি।
হারুন-অর–রশিদ অভিযোগ করেন, কর্মচারীদের উপেক্ষা করে তিনি দেখা করতে চাইলে উপাচার্যেরর নির্দেশে তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে কার্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে তিনি উপায় না পেয়ে কার্যালয় থেকে চলে আসেন।
শিক্ষক হারুন-আর-রশিদ আরও অভিযোগ করেন, উপাচার্য গণিত বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম করার জন্যই তাঁকে (হারুন-আর-রশিদ) নিয়োগ বোর্ডে প্রবেশ করতে দেননি। তাঁকে নামমাত্র বোর্ডে রেখে নিজের ইচ্ছামতো প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে চাইছেন। যে কারণে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ কার্যক্রম চালিয়েছেন। অন্যদিকে দুপুর ১২টায় নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের পর কোনো প্রকার ফলাফল প্রকাশ না করে পছন্দের প্রার্থীদের ডেকে বেলা তিনটায় মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করেছেন। তাই তিনি এই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের দাবি করেন।
হারুন–অর–রশিদ বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ে চারজন ‘সেকশন অফিসার’ নিয়োগ করা হয়েছে। সে নিয়োগ বোর্ডে উপাচার্য নিজে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থেকে কানিজ ফাতেমা নামে তাঁর এক আপন বড় ভাইয়ের মেয়েকে চাকরি দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক হারুন-আর-রশিদের সুরেই সুর মেলান উপস্থিত নিয়োগবঞ্চিত মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি সেকশন অফিসার পদে চাকরির আবেদন করেছিলেন। কিন্তু উপাচার্য নিজের ভাতিজিসহ পছন্দের প্রার্থীদের চাকরি দিতেই তাঁকে বঞ্চিত করেছেন বলে অভিযোগ তোলেন। তিনি নিয়োগ বোর্ডে উপাচার্য সভাপতি থাকার প্রমাণ হিসেবে তিন হাজার টাকার সম্মানী গ্রহণের একটি ভাউচার উপাস্থাপন করেন।
আতিকুল ইসলাম বলেন, তিনি নিয়োগ পরীক্ষায় তাঁর প্রাপ্য নম্বর জানতে উপাচার্য বরাবর কয়েক দফা তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেছেন। কিন্তু তিনি কোনো সাড়া পাননি। পরবর্তী সময়ে উপাচর্যকে আইনি নোটিশ দিয়েছেন। এতেও কোনো সাড়া পাননি। শেষ পর্যন্ত আইনি প্রক্রিয়ায় লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জানতে চাইলে উপাচার্য মো. রোস্তম আলী সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। শিক্ষক হারুন-অর-রশিদের নাম বলতেনই তিনি বলেন, ‘ধুর পাগল–ছাগল, ও পাগল একটা। ওর ওয়াইফ (স্ত্রী) চাকরিপ্রার্থী, সে তো বোর্ডে থাকতে পারে না। নিজেই থাকতে চায়নি। যা বলছে সব মিথ্যা কথা। কোনো লাঞ্ছিতও করা হয়নি সব মিথ্যা বলছে।’
নিজে বোর্ডের চেয়ারম্যান থেকে ভাতিজিকে চাকরি দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হুম। আমার ভাতিজি। তবে সে নিয়োগ বোর্ডে আমি সভাপতি ছিলাম না।’
এর আগে ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ’ বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। উত্তীর্ণদের তালিকা থেকে বাদ পড়েন কুমিল্লার সদরের কৃষ্ণনগর গ্রামের মনিরুল ইসলাম। তালিকায় নিজের নাম না দেখে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে গিয়ে উপাচার্যর পথ রোধ করেন। তিনি চাকরির জন্য উপাচার্যকে ঘুষ দিয়েছেন দাবি করে সেই টাকা ফেরত চান। পরে এ–সংক্রান্ত একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পরে। পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর নিয়োগ নিয়োগটি বাতিল হয়।