দফায় দফায় কাঁচামালের দাম বাড়তে থাকায় এক বছরের বেশি সময় ধরে শরীয়তপুরের বেকারি পণ্য তৈরির কারখানাগুলো টানাপোড়েনের মধ্য ছিল। এর মধ্যে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে লাগামহীন তেলের দাম। লোকসানের পাল্লা বেড়ে যাওয়া উৎপাদনই বন্ধ করে দিয়েছে ৯৬টি বেকারি পণ্য তৈরির কারখানা।
শরীয়তপুর জেলা বেকারি মালিক সমিতি সূত্র জানায়, শরীয়তপুর জেলায় ৯৬টি বেকারি রয়েছে। বেকারিগুলো বিস্কুট, টোস্ট, চানাচুর, কেক, পাউরুটিসহ নানা খাদ্যপণ্য উৎপাদন করে। এসব পণ্য শরীয়তপুর জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে বিপণন করা হয়ে থাকে। তেলের দাম ও অন্যান্য কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিতে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে বেকারিগুলো উৎপাদন ও বিপণন বন্ধ রেখেছে।
বেকারিমালিকেরা বলছেন, এক বছর ধরে দফায় দফায় তেল, চিনি, ময়দা ও ডালডার মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন তাঁরা। বর্তমান অবস্থায় বেকারি ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়ানোর বিকল্প নেই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ভোক্তাপর্যায়ে সাড়া না পাওয়ার ভয় আছে। ফলে উপায় না পেয়ে আপাতত উৎপাদনই বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। অনেক ব্যবসায়ী টিকে থাকতে না পেরে বেকারি ব্যবসা ছেড়েই দিয়েছেন।
বর্তমানে বেকারির মালিকদের প্রতি লিটার তেল কিনতে হয় ১৬৮ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি চিনি ৭৫, ময়দা ৫২ ও ডালডা ১৮৭ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এক বছর আগেও ১ লিটার তেল ৯০ থেকে ৯২ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, ময়দা ২৯ থেকে ৩০ টাকা ও ডালডা ৯৮ থেকে ১০০ টাকায় কেনা যেত। বেকারির খাদ্যপণ্য তৈরির এসব কাঁচামালের দাম প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এ খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। তাঁরা বলছেন, গত এক মাসে প্রতি লিটার তেলে বৃদ্ধি পেয়েছে ২৬ টাকা। প্রতি কেজি চিনিতে দাম বেড়েছে ৫ টাকা, ময়দায় ৭ থেকে ৮ টাকা ও ডালডায় বৃদ্ধি পেয়েছে ২৫ টাকা।
শরীয়তপুরের বেকারিগুলো বর্তমানে গড়পড়তা প্রতি কেজি বিস্কুট বিক্রি করে ৯৫ টাকা, টোস্ট ৮৫ টাকা, চানাচুর ১১০ টাকা, কেক প্রতি পাউন্ড ৪২ টাকা ও প্রতি পাউন্ড পাউরুটি বিক্রি করা হচ্ছে ৪০ টাকায়। কাঁচামালের দাম, শ্রমিক, আনুষঙ্গিক খরচসহ এই দামে পণ্য বিক্রি করে দিন শেষে লোকসানই গুনতে হচ্ছে বেকারিমালিকদের।
শরীয়তপুর বিসিক শিল্পনগরীর জয়া ফুডের মালিক জাহাঙ্গীর ঢালী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে দামে বেকারির পণ্য বিক্রি করছি, তার চেয়ে উৎপাদন খরচই এখন বেশি হচ্ছে। ঋণ করে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখছি। দিশেহারা হয়ে পণ্য উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছি। মূল্যবৃদ্ধি করতে পারলে আবার বেকারি চালু করা হবে।’
ভাই ভাই ফুড প্রডাক্টের মালিক মনির হোসেন বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে বেকারির খাদ্যপণ্যের কাঁচামালের দাম বাড়ছে। আমরা কীভাবে ব্যবসা টিকিয়ে রাখব। এর শেষ কোথায়, তা–ও বুঝতেছি না। বছরজুড়ে লোকসান গুনে এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছি। পারছি না ছেড়ে দিতে, পারছি না লোকসান বন্ধ করতে।’
শরীয়তপুর জেলা বেকারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ন্ত্রণহীন বাজার ব্যবস্থার বলি হচ্ছেন শরীয়তপুরের বেকারি শিল্পের উদ্যোক্তারা। কাঁচামালের দামের সঙ্গে উৎপাদন ব্যয় সমন্বয় করতে না পারায় লোকসান হচ্ছে। লোকসান সহ্য করতে না পেরে ঋণগ্রস্ত হয়ে অনেক ব্যবসায়ী বেকারির ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। এখন যাঁরা আছেন, তাঁরা টিকতে না পেরে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করার জন্য বেকারির উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন।
জানতে চাইলে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায়ীরা স্থানীয় বাজারে যাতে তেল, চিনি, ময়দাসহ ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানো এবং সংকট সৃষ্টি করতে না পারেন, তার জন্য জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাজারগুলোতে কাজ করছেন। আর কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বেকারির উৎপাদন বন্ধ রাখার বিষয়টি জানা নেই। বেকারিমালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে এর সমাধান করা হবে।