দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্প্রতি নির্বাচনের ফলে ভেঙে পড়েছে। এরই প্রতিফলন দেখা গেছে উপজেলা নির্বাচনে। এ মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
সিলেটে ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বদিউল আলম মজুমদার এ কথা বলেন। আজ শনিবার বিকেলে সিলেট নগরের বন্দরবাজার এলাকার একটি রেস্তোরাঁর সম্মেলনকক্ষে এ অনুষ্ঠান হয়। সুজন এর আয়োজন করে।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সম্প্রতি বিতকির্ত নির্বাচনের কারণে নির্বাচন পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষ অনাস্থা প্রকাশ করেছে। গণতন্ত্র বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে উন্নয়ন হচ্ছে নিঃসন্দেহে। অনেক বিরাট বিরাট প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। আমরা অর্থনীতির দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছি ঠিকই। একই সঙ্গে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন চরম আকার ধারণ করছে। বৈষম্য দিন দিন আকাশচুম্বী হচ্ছে। সুশাসনের অভাব চরম আকার ধারণ করেছে। শাসনপ্রক্রিয়া ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। আইনকানুন, বিধিবিধানের মূলে রয়েছে ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার।’
সুজন সম্পাদক বদিউল বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করে নাগরিক অধিকার হরণ করার আইন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়ছে। বিচার বিভাগ, সংসদ ও নির্বাহী বিভাগ ভেঙে পড়েছে। শাসনপ্রক্রিয়ায় গলদ দূর করতে সুদূরপ্রসারী সংস্কার ও এতে সবার এবং আইনপ্রণেতাদের আন্তরিকতা প্রয়োজন। শাসনব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সবার সদিচ্ছা থাকতে হবে। সদিচ্ছা ছাড়া কোনো কিছুর উন্নয়ন সম্ভব নয়।
সুজন সিলেটের সম্পাদক শাহ শাহেদার সঞ্চালনায় আলোচনার শুরুতে সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। পরে বৈঠকের প্রবন্ধ পাঠ করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলিপ কুমার সরকার। আলোচনায় অংশ নেন বিএমএর সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি শামীমুর রহমান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তাহমিনা ইসলাম, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি তাপস দাস পুরকায়স্থ, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বেদানন্দ ভট্টাচার্য, সুজনের সহসভাপতি সৈয়দা শিরীন আক্তার, মানবাধিকার ও আইনি সংস্থা ‘ব্লাস্ট’ সিলেটের সমন্বয়ক আইনজীবী ইরফানুজ্জামান, টিআইবি–সমর্থিত নাগরিক সংগঠন সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সিলেটের সহসভাপতি সমিক শহীদ জাহান, কবি একে শেরাম, শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জায়েদা শারমিন স্বাতী, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহ দিদার আলম নবেল, মুক্তচিন্তার সংগঠন ‘সমাজ অনুশীলন’ এর সদস্যসচিব মুক্তাদীর আহমদ প্রমুখ।
গোলটেবিল বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কারের ১৮টি প্রস্তাব পেশ করা হয়। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন, নির্বাচনী সংস্কার, কার্যকর জাতীয় সংসদ, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন বিচার বিভাগ, সাংবিধানিক সংস্কার, স্বাধীন বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, দুর্নীতিবিরোধী সর্বাত্মক অভিযান, বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শক্তিশালী নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার সংরক্ষণ, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, আর্থিক খাতের সংস্কার।