নিম্নমানের সার সরবরাহের প্রতিবাদে প্রধান ফটকে অবরোধ, বিক্ষোভ

নিম্নমানের সার সরবরাহের প্রতিবাদে রোববার জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে আবস্থিত যমুনা সার কারখানার প্রধান ফটকের সামনে পরিবেশক ও ট্রাক চালকেরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করে
ছবি: প্রথম আলো

যমুনা সার কারখানা থেকে নিম্নমানের সার সরবরাহের প্রতিবাদে পাঁচ শতাধিক পরিবেশক, শ্রমিকনেতা ও ট্রাকচালক কারখানার প্রধান ফটকে দুই ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন। গতকাল রোববার তাঁরা এই কর্মসূচি পালন করেন।

কারখানার পরিবেশক (ডিলার), ট্রাকচালক ও শ্রমিকনেতাদের সূত্রে জানা গেছে, জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দিতে অবস্থিত এই কারখানা থেকে এক বছর ধরে আমদানি করা জমাট বাঁধা সার সরবরাহ করা হচ্ছিল। পরিবেশকেরা নিম্নমানের সার সরবরাহের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। এরপরও কর্তৃপক্ষ এই কারখানায় উৎপাদিত সারের সঙ্গে বিসিআইসির দেওয়া আমদানি করা নিম্নমানের সার সরবরাহ করে আসছিল।

নিম্নমানের সার সরবরাহ করার প্রতিবাদে পরিবেশক, শ্রমিকনেতা, ট্রাকচালক ও তাঁদের সহকারীরা গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত প্রধান ফটকে অবস্থান করেন। এ সময় তাঁরা দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় খাওয়ার জন্য বিরতি থাকলেও এই কর্মসূচির কারণে কারখানার চার শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী আটকা পড়েন।

এরপর বিষয়টি নিয়ে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুদীপ মজুমদার বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন জামালপুর জেলা শাখা, তারাকান্দি ট্রাক ও ট্যাংকলরি মালিক সমিতি, তারাকান্দি ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ড ভ্যান চালক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে কারখানার সম্মেলনকক্ষে বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রত্যেক পরিবেশককে ২০ বস্তা আমদানি করা সারের স্থলে ভালো মানের ১৫ বস্তা সার সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত হয়।

এ সিদ্ধান্ত জানার পর বেলা দেড়টায় পরিবেশক ও ট্রাকশ্রমিকেরা কারখানার প্রধান ফটকের সামনে থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। কারখানার প্রধান ফটকের সামনে থেকে অবস্থান ও অবরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও বিকেল পর্যন্ত সার সরবরাহ বন্ধ ছিল। নিম্নমানের সার সরবরাহ করার প্রতিবাদে গত শনিবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে পরিবেশকেরা কারখানা থেকে ট্রাকে সার নেওয়া বন্ধ করে দেন। এতে দুই দিন ধরে ১৯ জেলায় সার সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় যমুনা সার কারখানা থেকে সার নেওয়া বন্ধ রেখেছেন পরিবেশকেরা। এতে কারখানার সামনে ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখায় তারাকান্দা–ঢাকা মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে

কয়েকজন পরিবেশকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি ট্রাকে ১১ টন যমুনা সার ও এক টন আমদানি করা সার দেওয়া হচ্ছিল। আমদানি করা সার নিম্নমানের হওয়ায় তা ট্রাকচালক ও পরিবেশকেরা নিতে চাচ্ছিলেন না। আমদানি করা সার পিটিয়েও ভাঙা যায় না। এই সার জমিতে সরবরাহ করলে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়ে যাবে। তাই পরিবেশকেরা সার নেওয়া বন্ধ রেখেছিলেন।

প্রতি ট্রাকে ১১ টন যমুনা সার ও এক টন আমদানি করা সার দেওয়া হচ্ছিল। আমদানি করা সার নিম্নমানের হওয়ায় তা ট্রাকচালক ও পরিবেশকেরা নিতে চাচ্ছিলেন না।

ট্রাকচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কারখানা থেকে জোরপূর্বক নিম্নমানের সার সরবরাহ করায় আমাদের পরিবেশকদের গালি শুনতে হয়। নিম্নমানের সার নেওয়ায় পরিবেশকেরা আমাদের ভাড়ার টাকা দেন না। তাই আমরা কারখানার প্রধান ফটকে অবরোধ কর্মসূচি পালন করি।’

তারাকান্দি ট্রাক ও ট্যাংকলরি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পরিবেশক আশরাফুল আলম জানান, দুই দিন ধরে কারখানা থেকে নিম্নমানের সার সরবরাহের প্রতিবাদে আন্দোলন চলছিল। পরিবেশকদের কারখানা থেকে ভালো সার সরবরাহ করার আশ্বাস দেওয়া হলেও শ্রমিক না থাকায় সরবরাহ বন্ধ আছে। আজ সোমবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে পরিবেশকেরা ট্রাকে সার নেওয়া শুরু করবেন।

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন জামালপুর জেলা শাখার সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কারখানার কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে। প্রতি ট্রাকে আমদানি করা ১৫ বস্তা সার নিতে হবে। আগামীকাল সোমবার যথারীতি পরিবেশকেরা সার নেওয়া শুরু করবেন।’

কারখানার উপমহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মঈনুল হক গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে জানান, পরিবেশকেরা জমাট বাঁধা সার না নেওয়ায় দুই দিন ধরে কারখানা থেকে সার সরবরাহ বন্ধ ছিল। এখন পরিবেশকেরা আমদানি করা ১৫ বস্তা সার নেওয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ায় আগামীকাল সোমবার আবার সার সরবরাহ শুরু হবে।