দেশের অন্যতম পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জে ভোজ্যলবণ আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। সরবরাহও আছে প্রচুর। তবে দাম বেড়েছে শিল্প লবণের। ৭৪ কেজি ওজনের শিল্প লবণ বস্তাপ্রতি বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা।
শিল্পমালিকেরা জানিয়েছেন, ভোজ্যলবণের মতো সরকার শিল্প লবণের বাজার তদারক করলে দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, গুজবের কারণে অতিরিক্ত লবণ বিক্রি, ধর্মঘটসহ বিভিন্ন কারণে শিল্প লবণের দাম একটু বেড়েছে। চট্টগ্রাম থেকে লবণ এলে হয়তো দাম কমতে পারে।
গতকাল বৃহস্পতিবার নিতাইগঞ্জে লবণের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভোজ্যলবণ তীর ২৫ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা ৫২০ টাকা, পূবালী সল্ট ৫২০ টাকা, কনফিডেন্ট সল্ট ৬২০ টাকা, ফুলকপি লবণ (মোটা) ২৫ কেজি ওজনের প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ টাকায়। এ ছাড়া ৭৪ কেজি ওজনের বস্তা ৮০০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকা। আয়োডিনযুক্ত খাওয়ার লবণ ২৫ কেজি ওজনের বস্তা ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শিল্প লবণ ৭৪ কেজি ওজনের বস্তা ৭০০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও প্রতি বস্তা শিল্প লবণের দাম ছিল ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। ক্রুড লবণ প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৫২০ টাকা। গত এক সপ্তাহের তুলনায় প্রতি বস্তায় বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা।
লবণ কিনতে আসা আড়াইহাজার উপজেলার পুরিন্দা এলাকার ব্যবসায়ী অহিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, গুজবের কারণে লবণের চাহিদা বেড়েছিল। পাইকারি ভোজ্যলবণ বিক্রি করেছেন ২৫ কেজি ৩২০ টাকা। তবে গুজবের সুযোগে অনেকে লবণের বাড়তি দাম নিয়েছেন বলে তিনি স্বীকার করেন। এই কারণে হঠাৎ লবণের চাহিদা বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, লবণের উৎপাদন অন্যান্য বছর থেকে বেশি হয়েছে। তবে গুজবের কারণে বাজারে লবণের জোগানে চাপ পড়েছে। চট্টগ্রাম থেকে লবণ সরবরাহ হলে বোঝা যাবে বাড়বে, নাকি কমবে?
গরিবে নেওয়াজ সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক জামাল উদ্দিন বলেন, ভোজ্যলবণের দাম বাড়েনি। শিল্প লবণের দাম একটু বেশি। বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। নারায়ণগঞ্জ সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপক শ্যামল সাহা বলেন, বাজারে কোনো ঘাটতি নেই। প্রচুর সরবরাহ আছে। গুজব ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছিল। ছয় মাস যাবৎ কৃষকেরা কম দামে লবণ বিক্রি করেছেন। তাঁদের উৎপাদন খরচ দিয়ে সমান ছিল, তেমন একটা লাভ হতো না। এবার কৃষকেরা কিছু লবণ মজুত করেছেন। এখন আয়োডিন ছাড়া খাওয়ার লবণ প্রতি বস্তা কক্সবাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। ক্রাসিং লবণ বিক্রি হচ্ছে ৬৩০ থেকে ৬৪০ টাকায়।
এদিকে গত বুধবার লবণ মিল মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন। বৈঠকে পূবালী সল্টের মালিক জেলা লবণ মিল মালিক সভাপতির পরিতোষ কান্তি সাহা বলেন, লবণ আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জসহ দেশের প্রচুর পরিমাণে লবণ মজুত আছে। যারা গুজব ছড়িয়ে অতিরিক্ত দামে লবণ বিক্রির চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের উপমহাব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান জানান, নারায়ণগঞ্জ ৩৪টি লবণ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে ভোজ্যলবণ মজুত আছে ৭ হাজার ৬১৭ মেট্রিক টন, শিল্প লবণ ১ হাজার ৪৮৫ টন, ক্রুড লবণ ৬৭ হাজার ৬৮৩ মেট্রিক টন। বাজারে লবণের দাম বাড়েনি।
জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, লবণ মিলমালিকদের মাধ্যমে ডিলার ও পাইকারি বাজারে সারা দেশে লবণের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। লবণ নিয়ে গুজব ছড়িয়ে কেউ যাতে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে, সে কারণে জেলা প্রশাসন নিয়মিত বাজারগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে।
বিকেএমইএ জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গুজবের কারণেই হয়তো শিল্প লবণের দাম একটু বেড়েছে। সরকার তদারক করলেই দাম কমে আসবে।