‘নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকিয়েছি’

নেত্রকোনার কলমাকান্দায় নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকানো কিশোরী অণিমা সুলতানাকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ক্রেস্ট দিযে অভিনন্দন জানাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা। আজ সোমবার কলমাকান্দা উপজেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে
প্রথম আলো

‘গল্পটা মাস ছয়েক আগের। এক দিন বিকেলে খালা ঘরে বসে আমার বিয়ে নিয়ে বরের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে আলাপ করছিলেন। পরদিন বিয়ের তারিখও নির্ধারণ করা হয়। বর একই গ্রামের প্রতিবেশী পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। আড়াল থেকে তাঁদের মুখে বিয়ে ঠিক হওয়ার কথা শুনে আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। হঠাৎ বুকে সাহস নিয়ে কাউকে বুঝতে না দিয়ে কৌশলে ঘর থেকে বের হয়ে দ্রুত চলে যাই স্থানীয় কিশোর-কিশোরী ক্লাবে। সেখানে জেন্ডার প্রমোটার মিতালী রানী সাহাকে সবকিছু খুলে বলি। তিনি আমাকে নিয়ে বাল্যবিবাহ বন্ধের অভিযানে নামেন। একে একে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা পপি রানী তালুকদার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহেল রানাসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে। এভাবে নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকিয়েছি।’

আজ সোমবার সকালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নিজের বাল্যবিবাহ বন্ধের এ গল্প শুনিয়েছে অণিমা সুলতানা নামের ১৪ বছরের এক কিশোরী। তার বাড়ি নেত্রকোনার কলমাকান্দার উপজেলার লেঙ্গড়া ইউনিয়নের উদাপাড়া গ্রামে, বাবার নাম ইউনুছ মোল্লা। সে লেঙ্গুড়া উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।

অণিমা জানায়, তাদের পরিবারটি হতদরিদ্র। তার মা-বাবা দীর্ঘদিন ধরে পাবনা শহরে শ্রমিকের কাজ করেন। এক ভাই ও এক বোন মা–বাবার কাছে থাকে। আর সে খালার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া চালাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে তার খালা তাকে না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করেন। অণিমা কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্য হওয়ার সুবাদে বাল্যবিবাহের কুফল তার জানা ছিল।

উপজেলা প্রশাসন ও মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় আয়োজিত উপজেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নেত্রকোনা-১ আসনের (কলমাকান্দা-দুর্গাপুর) সাংসদ মানু মজুমদার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহেল রানা। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছাড়াও বক্তব্য দেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক তালুকদার, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা পপি রানী তালুকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা চন্দন বিশ্বাস, প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজ্জাক আহমেদ প্রমুখ।

অণিমা জানায়, তাদের পরিবারটি হতদরিদ্র। তার মা-বাবা দীর্ঘদিন ধরে পাবনা শহরে শ্রমিকের কাজ করেন। এক ভাই ও এক বোন মা–বাবার কাছে থাকে। আর সে খালার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া চালাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে তার খালা তাকে না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করেন। অণিমা কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্য হওয়ার সুবাদে বাল্যবিবাহের কুফল তার জানা ছিল।

এ বিষয়ে কিশোর-কিশোরী ক্লাবের জেন্ডার প্রমোটার মিতালী রানী সাহা বলেন, ‘আমরা বিদ্যালয়গুলোয় গিয়ে প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে বাল্যবিবাহের কুফল নিয়ে আলোচনা করে থাকি। অণিমা সুলতানা যখন তার নিজের বাল্যবিয়ের কথা আমাকে জানায়, তখন উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ও ইউএনও স্যারকে বিষয়টি অবগত করি। পরে তাঁদের কথামতো অণিমার খালাকে বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর দিক বুঝিয়ে বিয়েটি বন্ধ করেছি।’

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা পপি রানী তালুকদার বলেন, অণিমা নিজের বাল্যবিবাহ বন্ধ করে অন্য মেয়েদের কাছে অনুকরণীয়। তাকে আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে করোনাকালে কিশোরী কন্যার বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সাহসিকতার পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।

কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল রানা বলেন, ‘অণিমা নিজের বাল্যবিবাহ বন্ধ করে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে। শুনেছি মেয়েটির পরিবার হতদরিদ্র। তার লেখাপড়া যেন ব্যাহত না হয়, এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।’