জীবাণুমুক্ত করার লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ শহরের মণ্ডলপাড়ায় অবস্থিত ১ শ শয্যাবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের(ভিক্টোরিয়া) জরুরি বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার রাত ১১টার দিকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে জরুরি বিভাগে রোগী দেখা কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের যথারীতি সেবা দেওয়া হবে। জরুরি সেবার জন্য রোগীদের শহরের খানপুরে অবস্থিত ৩ শ শয্যাবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
জেলা করোনা বিষয়ক ফোকাল পারসন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে হাসপাতালের বহির্বিভাগে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সীমিত পরিসরে প্রতিদিন (সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত) চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ মার্চ নারায়ণগঞ্জ জেলায় প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়ে বন্দর উপজেলার ৪৫ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যু হয়। ২৯ মার্চ জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ওই নারীকে তাঁর স্বজনেরা চিকিৎসার জন্য ১ শ শয্যার নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছিলেন। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। ঢাকা মেডিকেল থেকে ওই নারীকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু স্বজনেরা তাঁকে সেখানে না নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় তাঁর বাবার বাড়িতে ফেরত নিয়ে আসেন। পরদিন অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
স্বজনেরা ওই নারীর লাশ বন্দর উপজেলার বাড়িতে নিয়ে গোসল শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করেন। পরে আইইডিসিআরে পরীক্ষায় ওই নারীর করোনা শনাক্ত হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা জানান, করোনা আক্রান্ত ওই নারীকে জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য নেওয়া হয়েছিল। ওই নারী ছাড়াও কয়েকজন করোনা রোগ গোপন করে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাই ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারীর সংস্পর্শ থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। ওই নারী যেসব জায়গায় গিয়েছেন সেখান থেকেও করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। এখন শুধু প্রবাসী নয়, স্থানীয় পর্যায় থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, করোনা রোগীর সংস্পর্শে এসে এক ওয়ার্ড বয়, ব্রাদার ও অ্যাম্বুলেন্স চালক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তাঁদের আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে। এ কারণে করোনা জীবাণুমুক্ত হাসপাতাল জীবাণুনাশক দিয়ে ধুয়ে মুছে দেওয়ার পর পুনরায় জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কার্যক্রম চালু করা হবে।
নারায়ণগঞ্জে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক নারীসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা আক্রান্ত হয়েছেন আইইডিসিআরের অধীনে চিকিৎসাধীন আছেন এক চিকিৎসকসহ ২৩ জন। করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় জেলা প্রশাসন চারটি এলাকার ১২শতাধিক পরিবারকে লকডাউন (অবরুদ্ধ) করেছে। গত রোববার দুপুরে করোনা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী সিটি করপোরেশন এলাকা জরুরি ভিত্তিতে লকডাউন বা কারফিউ জারি করতে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি অনুরোধ জানান।